দীর্ঘ ভোগান্তি শেষে লক্ষাধিক মানুষের মুখে হাঁসি
কিছু দিন আগেও নাটোরের সিংড়া উপজেলার জামতলী থেকে বামিহাল রাণীনগর রাস্তার আশপাশে বসবাসকারীসহ ওই রাস্তায় চলাচল করা মানুষদের যাতায়াতে ছিল সীমাহীন দুর্ভোগ। ওই দুর্ভোগে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। মাঝে মাঝেই রাস্তায় খানাখন্দ, রাস্তার মাঝে দেবে যাওয়াসহ নানা সমস্যা স্বত্বেও ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হতো তাদের। এতে প্রায়ই ঘটতো দুর্ঘটনা। মাঝে মধ্যেই জখম হতেন পথচারীরা। বিপদে পড়তেন হাসপাতালে যাতায়াত করা রোগী ও তাদের স্বজনরা। বিশেষ করে সন্তান সম্ভবা মায়েদের দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে বেশী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ওই রাস্তা দিয়ে মালামাল পরিবহন করতে সমস্যায় পড়তেন। কৃষক আর মৎস্যজীবিরাও পড়তেন সমস্যায়। তবে এ বিষয়টি নজরে এলে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনায় শুরু হয় ওই রাস্তার সংস্কারের কাজ। কাজের ধরণ আর গতি দেখে এখন আশার আলো দেখছেন আশপাশের শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। তাদের মুখে ফুটে উঠেছে হাঁসির ঝলক।
তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিওবি মেইনটেইনান্স প্রকল্পের আওতায় ওই উন্নয়ন কাজ ১০ নভেম্বর শুরু হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমসি-জেএসএমসি(জেভি) কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন। কাজটির পার্টনার ইনচার্জ রানা মিয়া। আর ওই কাজের ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউসুফ সরকার। সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালনকারীরা কাজটির জন্য মালামাল মজুদ করেন ৩০ নভেম্বর। কাজের গুণগত মান বজায় রেখে সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই কাজ উপহার দিতে বর্তমানে দ্রুত গতিতে চলছে ওই রাস্তার সংস্কার কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই রাস্তায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিক, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আর উপজেলা প্রকৌশলী। কোথাও চলছে পুরাতন রাস্তা ভাঙা, কোথাও খোয়া দেওয়া, কোথাও ইট সাজিয়ে দেওয়া, কোথাও বালি দেওয়া, কোথাও রোলার দিয়ে খোয়া-বালি রোল করার কাজ। এরই মাঝে আবার পানি দিয়ে রাস্তায় বিছানো খোয়া-বালি দাবিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে। এ যেন বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর ওই কাজ দেখতে মাঝে মধ্যেই থামছেন পথচারী আর স্থানীয় অধিবাসীরা। তাদের চোখে-মুখে তৃপ্তি আর আনন্দের ঝলক সহজেই লক্ষনীয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আলম বলেন, জামতলী থেকে বামিহাল রাণীহাট পর্যন্ত দুইটি ফেজে মোট ৯ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার ওই কাজে বের তৈরি হচ্ছে ১৬ ফুট। এ ছাড়া কয়েক জায়গায় পুকুরের পাশে রাস্তা সংলগ্ন গাইড ওয়াল হচ্ছে মোট ১৪০ মিটার। তা ছাড়া বিনগ্রাম বাজার, রাণীপুকুর, রাতাল বাজার ও চওড়া এলাকায় মোট ৫৫০ মিটার আরসিসি ঢালাই দিয়ে সাবমার্সিবল কাজ চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, নির্দেশনা মেনে রাস্তার আগের ইট পুনরায় ব্যবহার হচ্ছে। এর সাথে নতুন প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে ৩ ইঞ্চি ডব্লিউবিএম এর উপর ৪০ মিলিমিটার কার্পেটিং আর ৫৫০ মিটারে ৮ ইঞ্চি ঢালাই হচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তাটিকে টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রাস্তাটির কাজের ইনচার্জ ইউসুফ সরকার জানান, যথাযথ নির্দেশনা মেনে কাজটি করা হচ্ছে। কাজটিতে তাদের সচেতনতা ও আন্তরিকতার উদাহরণ দিয়ে তিনি আরো দাবি করেন,ওই কাজটি সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও তাদের বাইরে এলজিইডির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর ও তদারকি করছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি ওই কাজে অসাবধানতাবশত এক গাড়ি খোয়া নিম্ন মানের এসেছিল। বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ও এলজিইডির প্রধান ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশনায় ওই নিম্ন মানের খোয়া ফেরত পাঠিয়ে পুনরায় ভালো খোয়া নিয়ে আসা হয়েছে।
রাস্তার কাজটি সুন্দর, টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন করতে সকল পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে দাবি করে ইনচার্জ ইউসুফ সরকার আরও জানান, নির্ধারিত আগামী বছরের মে মাসের অনেক আগেই কাজটি সম্পন্ন করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা।
এদিকে ওই রাস্তার সংস্কার কাজ দেখে আনন্দিত এলাকাবাসীও। স্থানীয় রাতাল এলাকার বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ জানান, কাজের ধরন দেখে তারা আনন্দিত। ওই কাজটি সম্পন্ন হলে তার সংশ্লিষ্ট এলাকার, শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন। দীর্ঘ ভোগান্তির পর এত সুন্দরভাবে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় তারা আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, বর্তমান সরকার, এলজিইডি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
স্থানীয় বিনগ্রাম বাজারের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতিদিনই ওই রাস্তায় যাতায়াত করেন। তিনি নিজ চোখে ওই কাজ দেখে অত্যন্ত আনন্দিত। যেভাবে কাজটি করা হচ্ছে তা আগের কাজের তুলনায় অনেক ভালো।
তিনি দাবি করেন, কাজটি সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট সকলেরই ভোগান্তি বন্ধ হবে। আর এর উপকারভোগী হবেন লক্ষাধিক জনতা।
এসআইএইচ