চাষিদের প্রণোদনার অর্থ কেটে নিলেন কৃষি কর্মকর্তা

গ্রীষ্মকালীন আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী করতে প্রান্তিক চাষিদের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। সেই প্রণোদনায় ‘চা-নাস্তার খরচ’ বাবদ অর্থ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিনের বিরুদ্ধে।
চাষিদের অভিযোগ, বরাদ্দকৃত তালিকার তথ্য গোপন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। ১৫০ টাকা মূল্যে এক কেজি সুতলির বদলে চাষিদের দেওয়া হয়েছে প্লাস্টিকের দড়ি। শুধু তাই নয় বরাদ্দকৃত ১৫০ টাকার মধ্যে চাষিকে ১১৪ টাকা দেওয়া হয়নি।
এদিকে চাষিদের প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ব্যাপারে জানেন না উপ-পরিচালক। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, গত সোমবার (৩ অক্টোবর) সকাল ১০টায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে উপজেলা চত্বরে ১৫০ জন চাষিকে বিনামূল্যে প্রণোদনা সামগ্রী ও পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়। বরাদ্দের তালিকা অনুসারে, একজন চাষি ১ কেজি পেঁয়াজ বীজ, ২০ কেজি ডিএপি, ২০ কেজি এমওপি সার, ১০০ টাকার বালাইনাশক এবং জমি প্রস্তুতি, সেচ ও বাঁশের বেড়া তৈরিতে বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার ৮০০ টাকা পাবেন। সেই সঙ্গে ২ হাজার ১০০ টাকার পলিথিন ও ১৫০ টাকার সুতলি দেওয়ার কথা আছে। অথচ তালিকার বরাদ্দকৃত পুরো অর্থ পায়নি চাষিরা। জেলা থেকে পাঠানো বরাদ্দকৃত তালিকার তথ্য গোপন করে সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন। দেখা গেছে, বীজতলা তৈরিতে যে মানের দড়ি, পলিথিন প্রয়োজন তা পায়নি চাষিরা।
সূত্র বলছে, একজন চাষি যেখানে ২১০০ টাকার পলিথিন পাবেন সেখানে এর বিপরীতে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ থেকে ৩ কেজি সাদা রঙের পাতলা পলিথিন। যার বর্তমান বাজার মূল্য কেজি প্রতি ১৫০ টাকা। গড়ে ৩ কেজি পলিথিনের মূল্য আসে ৪৫০ টাকা। একজন কৃষক ২ হাজার ১০০ টাকার পলিথিনের বদলে পেয়েছেন মাত্র ৪৫০ টাকার পলিথিন। শুধুমাত্র পলিথিনে দুর্নীতি হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
একইভাবে ১৫০ টাকা মূল্যে ১ কেজি সুতলির বদলে কৃষক পেয়েছেন হরিণ মার্কা ৩টি প্লাস্টিকের দড়ি। যা ১ কেজিতে ৭টি ধরে, মূল্য ৮২ টাকা। এক একটি দড়ির পাইকারি কয়েলের মূল্য মাত্র ১২ টাকা। যার ৩টি প্লাস্টিকের কয়েলের মূল্য দাঁড়ায় ৩৬ টাকা। এখানে বরাদ্দকৃত ১৫০ টাকার মধ্যে চাষিকে ১১৪ টাকা দেওয়া হয়নি। দড়িতে দুর্নীতি প্রায় ১৭ হাজার টাকা।
এ ছাড়াও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ ও পরিবহন ব্যয়ের টাকা পায়নি চাষিরা। সাংবাদিকদের কাছে তথ্য গোপন করে কৌশলে ২১০০ টাকার পলিথিনের জায়গায় পলিথিনের পরিমাণ ১৫০ বর্গমিটার হিসাবে প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তথ্য প্রদান করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন।
মান্দার মৈনম ইউনিয়নের আনিছুর রহমান, ওছমান আলী, আশরাফুল ইসলাম,আব্দুল করিমসহ একাধিক চাষি জানান, এক কেজি পেঁয়াজ বীজ, ২০ কেজি ডিএপি, ২০ কেজি এমওপি সার ও থিমিড ৫০ মিলি একটি ওষুধের বোতল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেউ ১ কেজি সাড়ে ৭০০ গ্রাম আবার কেউ প্রায় ৩ কেজি পাতলা পলিথিন, তিনটি প্লাস্টিকের দড়ি ও ২৮০০ টাকা পেয়েছেন। মোট পলিথিন সর্বোচ্চ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার হবে। ভালো মানের দড়ি খুচরা বাজারে ১৫ টাকা পিস হিসেবে ৩টি বান্ডিলের মূল্য সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা হবে।
প্রণোদনার অর্থ নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন। তিনি বলেন, অফিসের বিভিন্ন খরচের (চা নাস্তার) জন্য চাষিদের পলিথিনে বরাদ্দকৃত ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে কিছু কেটে রাখা হয়েছে। কেটে রাখা টাকাগুলো সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘না’ বলেন।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই । খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।
এসআইএইচ
