নবজাতকের ঋণের পরিমান ৪৭ হাজার!

নাটোর সদর উপজেলার মাটিকোপা এলাকায় এক নবজাতক শিশুর ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার টাকা। ওই ঋনের কারণে ইতোমধ্যে ওই শিশু মায়ের আদরবঞ্চিত ছিল ৮ দিন। ওই ঋনের কারণে এখনও ঝুঁকিতে ওই শিশুর মায়ের আদরের সম্ভাবনা। পাশাপাশি ঝুঁকিতে নবজাতক শিশুর মায়ের সংসার। ওই শিশুর নাম শান্ত। শিশুটি মাটিকোপা এলাকার অধিবাসী ওবায়দুল্লাহ (৩০) ও স্বপ্না খাতুন(২৫) এর প্রথম সন্তান।
তথ্যমতে, ওবায়দুল্লাহ আর স্বপ্নার দ্বিতীয় সংসার এটি। ওবায়দুল্লাহর প্রথম স্ত্রীর সাড়ে ৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। অপরদিকে স্বপ্নার প্রথম সংসারে রয়েছে সাড়ে ৪ বছর বয়সী এক ছেলে। গত প্রায় ৯ মাস আগে ওবায়দুল্লাহর সাথে স্বপ্নার বিয়ে হয়। ওই সময় উভয়পক্ষে চুক্তি হয় যে, ১ বছর পর ওবায়দুল্লাহকে ৮০ হাজার টাকা দিবে স্বপ্নার পরিবার। সেই কারণে তাদের বিয়ে হলেও হয়নি রেজিষ্ট্রি। এদিকে বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই স্বপ্না গর্ভবতি হয়।
বিষয়টি জানার পর ওবায়দুল্লাহ ও তার পরিবার ধারণা করে, ওই সন্তান ওবায়দুল্লাহর না। ফলে প্রথম থেকেই গর্ভপাত করতে বলে তারা। বিষয়টি জানতে পেরে ওই পরিবারের আত্মীয়,গুরুদাসপুর উপজেলার বীরবাজার এলাকার সামাদের ছেলে মনিরুল স্বপ্নাকে গর্ভপাত না করে ওই সন্তান মনিরুলের স্বজনকে দিতে পরামর্শ দেয়। বিনিময়ে ওই সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহণের আশ্বাস দিলে সবাই সম্মত হয়।
গত ১৭ নভেম্বর তুচ্ছ বিষয় নিয়ে স্বপ্নার পেটে ওবায়দুল্লাহ আঘাত করলে সে অসুস্থ্য হয়। স্বজনরা তাকে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে। খবর পেয়ে মনিরুলরা সেখানে পৌছে। ডাক্তারের পরামর্শে ১৯ নভেম্বর সিজারিয়ানের মাধ্যমে পুত্র ষন্তানের মা হন স্বপ্না। কথামতো সকল খরচাদী,স্বপ্নার প্রয়োজনীয় রক্ত,ঔষধ ইত্যাদী দেয় মনিরুলের স্বজন গুরুদাসপুরের বীরবাজার এলাকার ইসমাইলের ছেলে নি:সন্তান মঞ্জু শেখ।
পরের দিন ২০ নভেম্বর আরো ১০ হাজার টাকা স্বপ্নাকে দিয়ে মোট ৪৭ হাজার টাকা খরচ করে শিশুটিকে নিয়ে যান মঞ্জু শেখ। খবর পেয়ে শিশুর নানী গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পাঁচপুরুলিয়া গ্রামের সিদ্দিকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ওই ক্লিনিকে গিয়ে মেয়েকে অচেতন অবস্থায় পান। স্বজনদের সাথে আলোচনা,সাপেক্ষে সদর থানায়,অভিযোগ দেয় যে,শিশুটিকে বিক্রি করেছে জামাই। পরে পুলিশ ২৯ নভেম্বর বিকালে শিশুটিকে উদ্ধার করে নানীর মাধ্যমে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঞ্জু শেখের প্রথম সংসারে কোন সন্তান না হওয়ায় দ্বিতীয় সংসার গড়েন। ওই সংসারেও গত ৮-১০ বছরে কোন সন্তান না হওয়ায় তারা নবজাতক পালন করতে চাইলে তিনি তার মধ্যস্থতা করে দেন। তিনি দাবী করেন, বুধবার সকালেও ওবায়দুল্লাহ তাকে জানিয়েছে, কয়েকদিন পরই ওই শিশুকে দিয়ে দেবেন। তবে তারা এবার ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে লেখাপড়া করে শিশুটি নিতে চেয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শিশু না দিলে তাদেরটাকা ফেরৎ দিতে বলা হয়েছে। এব্যাপারে শিশুর মা স্বপ্না সমস্ত বিষয় নিশ্চিত করে জানান, স্বামী ও তারস্বজনদের চাপে তিনিশিশু দিতে রাজি হয়েছিলেন। তবে ওই নবজাতক ছাড়া তিনি বাঁচবেননা দাবী করে জানান, শিশুকে দিতে এখনও স্বামী ও স্বজনরা,চাপ দিচ্ছে। একদিকে শিশু অপরদিকে নিজের সংসার বাঁচানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন দাবী করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার জেরে স্বামী যদি তাকে তালাকও দেয়,তবুও তিনি তার সন্তান শান্তকে দেবেন না।
এএজেড
