রাজশাহী মেডিকেলে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগী

রাজশাহীতে শুষ্ক-শীতল আবহাওয়ায় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার প্রকোপ বাড়ছে। এতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর চাপ। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত শারীরিক সমস্যার এই আধিক্য রুখতে সচেতনতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের প্রারম্ভের এই সময়টাই স্বাভাবিকভাবেই রোগের প্রকোপ বেড়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে অনেকের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের চেয়ে কমেছে। এ ছাড়াও অনেকে শারীরিক দুর্বলতাসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। সুতরাং এই সময়টা সবাইকে একটু সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি। বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধসহ যারা শ্বাসনালীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে বাড়তি নজরদারি থাকতে হবে।
রামেক হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শনিবার (১৯ নভেম্বর) ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শীতজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন মোট ৫৭৩ জন রোগী। যেটা একদিনের ব্যবধানে পূর্বের রোগীর তুলনায় ১৬১ জন বৃদ্ধি পেয়ে রবিবার (২০ নভেম্বর) দাঁড়ায় ৭৩৪ জনে। এভাবে প্রতিদিনই ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যার অধিকাংশই শীতজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তথ্য বলছে, শীতজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে শনিবার পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মোট ভর্তি রোগী ছিল ২ হাজার ৩৪৭ জন। আর এই রোগীর চাপ শুধুমাত্র জরুরি বিভাগেই নয়, বর্হিবিভাগেও বেড়েছে। যার একটি বড় অংশ প্রান্তিক এলাকার শিশু ও বৃদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি জানান, শীতের এই সময়টায় রোগের প্রকোপ বাড়েই। রোগীও বাড়ে। আর রাজশাহীতে ঠাণ্ডা একটু বেশিই পড়ে। যদিও এখনও সেইভাবে পড়েনি। তবে রোগী বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা সুজন আলী জানান, গত সপ্তাহ খানেক থেকেই তিনি হাসপাতালে যাওয়া-আসা করছেন। কিছুদিন আগে এক চাচাতো ভাইয়ের ডেঙ্গু ভালো হলো। এর মধ্যে ঠাণ্ডা লেগে তার আপন ভাইয়ের ডায়রিয়া হয়ে গেছে। চার দিনের চিকিৎসা শেষে রবিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ডাক্তার ছুটি দিয়েছে। এখন রোগী ভালো আছে।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রাশেদা (৫৬) খানম জানান, তার অ্যাজমার সমস্যা আছে। হঠাৎ করে একটু ঠান্ডা লেগে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সর্দি-কাশিও আছে। তাই খুব বেশি সমস্যা হওয়ার আগেই চিকিৎসকের কাছে এসেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাহাবুবুর রহমান জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়টায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। যেমন সর্দি-কাশি, অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যায়। জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় অনেকে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় ভোগেন। আবার যাদের আগে থেকেই এসব সমস্যা থাকে তাদের জটিলতা বাড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের কাশি, কোল্ড অ্যালার্জির মতো সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই এসব বিষয়ে আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও জানান, এ সময় স্ট্রোকের আধিক্যও দেখা যায়। সুতরাং নিজেকে সুরক্ষায় সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে এবং যারা আক্রান্ত হয়ে গেছেন তাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাদের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে।
এ ব্যাপারে রামেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, এ সময়টাই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। যেন ঠাণ্ডা না লাগে। যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন সমস্যা আছে। তাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলা। আর হাসপাতালের রোগীদের যথেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা আছে।
এসআইএইচ
