যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ছয় স্প্যান দৃশ্যমান
যমুনা নদীর বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর ছয় স্প্যান এখন দৃশ্যমান। ছয়টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ৫০টি পিলারের উপর ৪৯টি স্প্যানে তৈরী হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। সেতুটিতে ঘন্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে চলবে পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন। এই রেলসেতু বাস্তবায়িত হলে আমদানি রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। এতে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের গতি বাড়বে।
দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে সেতু নির্মিত হচ্ছে যমুনা নদীর বুকে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৪শ মিটার উজানে নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। ৫০টি পিলারের মধ্যে সেতুর পূর্ব পাশে ইতিমধ্যে ১২ পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৩৮টি পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। ৫০টি পিলারের উপর ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরী হওয়া পিলার গুলোর উপর স্প্যান বসানো কাজ করছেন দেশী বিদেশী প্রকৌশলীরা।
ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা বিশেষ ধরনের বড় বড় স্টিলের পাটাতন দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে স্প্যান গুলো। এটি তৈরী করা হচ্ছে ওয়েদার ষ্টিল দিয়ে। দেশের রেল সেতুতে এই ধরনের ষ্টিল ব্যবহার এই প্রথম। সংশ্লিষ্টদের দাবী এই নতুন স্টিল ব্যবহারের কারনে স্প্যান গুলো আলাদা ভাবে রং করার প্রয়োজন হবে না। ফলে আগামী ১শ বছরেরও সেতুর কাঠামোতে মরিচা ধরবে না। সময়ের সাথে সাথে গাডারের উজ্জলতাও বাড়বে।
এছাড়াও এই সেতুতে স্লিপার ছাড়াও বিশেষ পদ্ধিতে বসানো হবে রেল ট্র্যাক। এতে ঘন্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে চলবে পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন। এতে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের গতি বাড়বে। বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় রেল সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জায়কা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্পের সাইড চিফ ইঞ্জিনিয়ার (সুপার স্টাকচার) মো: আব্দুল খালেক বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর পূর্ব পাশের ১২টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর ৪৭-৪৮, ৪৮-৪৯ এবং ৪৩-৪৪, ৪৪-৪৫ ৪২-৪৩ ও ৪৯-৫০ নং পিলারে স্প্যান বসানোর কাজ শেষে হয়েছে। স্প্যানের উপর যে রেলটা বসবে তা মূলত জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এই রেলপথ দিয়ে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো: মাসুদুর রহমান বলেন, জাপানের দুটি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মান কাজ করছেন। ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। ইতিমধ্যে সেতুর ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারনত রেল ব্রীজে ষ্টিলের টাকচারের উপর স্লিপার দেয়। সেই স্লিপারের উপর রেললাইন বসানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে সরাসরি ষ্টিলের টাকচারের উপর ট্রেক বসানো হবে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এর নির্মাণকাজ শেষ হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ হলে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে। এতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। মালামাল পরিবহনে সময় ও খরচ কম হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়। তবে ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর লেনে প্রথম ফাটল দেখা দেয়। পরে ফাটলটি দক্ষিন লেনেও ছড়িয়ে পড়ে। এর থেকে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকৃত ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেয়া হয়।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়, বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
এএজেড