বিনা লাইসেন্সে কেউ ধান-চালের ব্যবসা করতে পারবে না: খাদ্যমন্ত্রী

বিনা লাইসেন্সে কেউ ধান-চালের ব্যবসা করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চদ্র মজুমদার বলেছেন, লাইসেন্স নেই এমন অনেক ব্যক্তি ধান-চাল কিনে মজুত করে রাখছেন। এতে বাজারে ধান-চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিনা লাইসেন্সে কোনো ব্যক্তি ধান-চালের ব্যবসা করতে পারবে না। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে সারাদেশে অভ্যন্তরীণ আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অনুষ্ঠানে নওগাঁ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোণা ও দিনাজপুর জেলার সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, চালকল মালিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত বোরা মৌসুম থেকে ধান-চাল ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা ধানের আড়তের ব্যবসা করছেন তাদেরকে প্রতি সপ্তাহে কতটুকু ধান কিনেছেন, কতটুকু ধান কিনে মিলে বিক্রি করছেন তার হিসাব সরকারকে দিতে হবে। চালকল মালিকদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। যারা এই হিসাব দেবে না তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এবার ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন দাখিলের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এ ছাড়া যেসব মিলার কর্পোরেট গ্রুপের কোনা ব্রান্ডের নামে চাল বাজারজাত করার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে উল্লেখ করে সাধন চদ্র মজুমদার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রন যুদ্ধ ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য সঙ্কট হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনা কারণ নেই। এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে। তবে কৃষকদেরও এই পরিস্থিতিতে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। নিজেদের
যেসব জমি আছে তার সবটুকু জুড়ে ফসল আবাদ করলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে খাদ্য আমদানি করতে হবে না।
কৃষকদের সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আহ্বান জানিয় মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষকদের চাষাবাদ উৎসাহিত করতে সার ও বিদ্যুৎ হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদের দায়িত্ব রয়েছে তাদের উৎপাদিত ধানের কিছু কিছু সরকারি গুদামে দেওয়া। ২০১৮-২০১৯ সালে ধানের দাম বাজারে অতিরিক্ত পরিমাণ কমে যায়। তখন কৃষকরা হা-হুতাশ করতে শুরু করেন। এ পরিস্থিতিতে সরকার কৃষকদের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে মৌসুমের শুরুতেই ধান-চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নয়। মৌসুমের শুরুতেই সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় করায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
নওগাঁ জেলার খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ধান আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং সিদ্ধ চাল আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ক্রয় করা হবে। উপজেলা ভিত্তিক যথাক্রমে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে নওগাঁ সদর উপজেলায় ধান ৫৮৬ মেট্রিক টন ও চাল ৯৩৭৪ মেট্রিক টন, রানীনগর উপজেলায় ধান ১১৪৩ মেট্রিক টন ও চাল ৮৫৩ মেট্রিক টন, আত্রাই উপজেলায় ধান ৪০৮ মেট্রিক টন, বদলগাছি উপজেলায় ধান ৮৩৭ মেট্রিক টন ও চাল ১৫৮ মেট্রিক টন, মহাদেবপুর উপজেলায় ধান ১৬৮৬ মেট্রিক টন ও চাল ৯৪৯৮ মেট্রিক টন, পত্নীতলা উপজেলায় ধান ১৪৮৩ মেট্রিক টন ও চাল ৮০৪ মেট্রিক টন, ধামইরহাট উপজেলায় ধান ১১৯৪ মেট্রিক টন ও চাল ২৪৪ মেট্রিক টন, সাপাহার উপজেলায় ধান ৫৭২ মেট্রিক টন, পোরশা উপজেলায় ধান ৮৮১ মেট্রিক টন ও চাল ৪৭৯ মেট্রিক টন, মান্দা উপজেলায় ধান ৯১৯ মেট্রিক টন ও চাল ১৫২ মেট্রিক টন এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ধান ১৭৪৫ ও চাল ২৫৯ মেট্রিক টন।
এসআইএইচ
