নওগাঁ-সান্তাহার মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
নওগাঁ-সান্তাহার সড়কে সরাসরি সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুই সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে গত ১২ দিন ধরে এই অবস্থা চলে আসলেও সমাধানে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। এতে করে সান্তাহার রেল জংশন স্টেশনের যাত্রী ও ওই সড়কে চলাচলকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। যাত্রীদের সময় অপচয়সহ গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নওগাঁ ও বগুড়ার সান্তাহার সীমানার পশ্চিম ঢাকা রোডের মোড় বেইলি ব্রিজের একপাশে নওগাঁর সীমানায় নওগাঁ সিএনজি ও অটোরিকশা মালিক-চালক সমিতির অর্ন্তভুক্ত চালকরা নিজ সীমানায় যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। আবার সান্তাহার জংশন স্টেশনের যাত্রীদের সান্তাহার সমিতির অর্ন্তভুক্ত চালকরা ব্রিজের ওপারে তাদের সীমানায় নামিয়ে দিচ্ছে। পরে যাত্রীরা বেইলি ব্রিজ পার হয়ে আবার সিএনজি-অটোয় ভাড়া দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার অনেকের অর্থের সংকুলান না হওয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে জংশন স্টেশনে পৌঁছাতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার সান্তাহার ও নওগাঁ জেলার সিএনজি ও অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতির অর্ন্তভুক্ত শত শত সিএনজি ও অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে সান্তাহার রেলস্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে আসছিল। পাশাপাশি সান্তাহার থেকে জয়পুরহাটে তিলকপুর পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কে সান্তাহার সমিতির যানবাহনগুলো চলাচল করে আসছে। সম্প্রতি নওগাঁ জেলার বেশ কিছু সিএনজি ও অটোরিকশা ওই ৪ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহার করলে বিরোধ বাঁধে সান্তাহার মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ৩ নভেম্বর উভয় পক্ষের চালকরা মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে উভয় পক্ষের ১৫-২০ জন আহত হন। এরপর থেকে এই যানবাহনগুলো সরাসরি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে নিজ নিজ সীমানায় চলাচল করছে। তবে এ বিষয় নিয়ে দুই সংগঠনের নেতারা একে অপরকে দোষারোপ করছে।
রবিবার বিকালে পশ্চিম ঢাকা রোডের মোড় এলাকায় রানীনগর যাওয়ার জন্য সিএনজির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. রিংকু নামে এক যাত্রী। তিনি জানান, বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেলে মায়ের চিকিৎসা শেষে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। এখন ঢাকা রোড থেকে রানীনগরে কোনো সিএনজি যাবে না, কারণ ওই সড়কটি সান্তাহার সমিতির অর্ন্তভুক্ত। এখন এই অসুস্থ মাকে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে আবার সান্তাহার রেলস্টেশনে গিয়ে সিএনজি ভাড়া করতে হবে।
তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, দুর্ভোগের পাশাপাশি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হলেও এটা নিরসনে কেউ এখনো উদ্যোগ নেয়নি।
এদিকে নওগাঁ শহরের মেরিগোল্ডপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আসাদুর রহমান জানান, গত শনিবার ভোর ৪টার দিকে ঢাকা থেকে সান্তাহার স্টেশনে নেমে দেখি নওগাঁ যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহন নেই। প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাসায় পৌঁছাতে হয়েছে।
এতে করে সিএনজি ও অটোরিকশার যে আয় কমেছে তা ওই দুই সংগঠনের চালকরা দাবি করেছেন।
সিএনজিচালক আক্কাস আলী, দুলাল হোসেন ও অটোরিকশা চালক মামুনুর রশিদ বলেন, আগে প্রতিদিন মালিককে জমা দিয়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা আয় করে বাড়ি ফিরেছি। এখন ২শ টাকা নিয়েও বাড়ি ফিরতে পারছি না। এভাবে আরও কয়দিন চললে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
সান্তাহার থেকে নওগাঁয় যাওয়া ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থী নাইমা ইসলাম বলেন, আগে নওগাঁয় যেতে এক গাড়িতেই সরাসরি চলে যাওয়া যেত। দ্বন্দ্বের কারণে তিনবার গাড়ি বদল করতে হয়। আর সেই কারণে সময় অপচয় হয় যেমন টাকাও গুনতে হয় বেশি।
নওগাঁ সিএনজি মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আলম সরকার বলেন, নওগাঁ মালিক সমিতির অর্ন্তভুক্ত সিএনজি ও অটোরিকশাগুলো আগে জেলার সীমানার মধ্য দিয়েই তিলকপুর যাতায়াত করত। বর্তমানে নওগাঁ ফতেপুর-তিলকপুর সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে আমরা সান্তাহার হয়ে তিলকপুর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে সান্তাহার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাধা দিয়ে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে নিরসনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। আমাদের চালকরা ওই সড়ক ব্যবহার করতে গেলেই তারা গাড়ি ভাঙচুরসহ তাদের মারধর করে। গত ৩ নভেম্বরের ঘটনায় আমাদের সমিতির অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
এদিকে বগুড়া জেলা সিএনজি-ব্যাটারিচালিত অটো মালিক সমিতির সভাপতি নুর ইসলাম বলেন, সান্তাহার হয়ে তিলকপুর পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কে সান্তাহার সমিতির অন্তভুর্ক্ত সিএনজি ও অটোরিকশাগুলো চলাচল করে। এর অধিকাংশ আবার তিলকপুর এলাকার চালক ও মালিক রয়েছে। সড়ক পাকা হওয়ার পর নওগাঁ মালিক সমিতির গাড়িগুলো ওই পথ ব্যবহার করার জন্য আমাদের গাড়ির ভাড়া কমে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের স্বার্থে নওগাঁর গাড়ি চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা নিষেধ উপেক্ষা করে জোর করে গাড়ি চালাতে গিয়ে উল্টো আমাদের সমিতির চালক-শ্রমিকদের মারধরসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই।
এ ব্যাপারে বগুড়ার সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, উভয় পক্ষের শ্রমিক ও মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। দুয়েক দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে।
এদিকে এ বিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফায়সাল বিন আহসান বলেন, দুই পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা চলছে। দ্রুত এর সমাধান করা হবে।
এসজি