‘টিকটকের কারণে ছেলে-মেয়েদের ঘরে রাখা যাচ্ছে না’

‘আমাদের গ্রামটা নষ্ট হয়ে গেল। এই টিকটক গ্রাম সমাজ সব নষ্ট করে দিল। গ্রামের তরুণী মেয়েগুলো টিকটকের নামে অশ্লীল কাজ করে বেড়ায়। এ পর্যন্ত আমাদের গ্রামের চারটি মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত একটি মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে থানা পুলিশ করেও কোনও লাভ হয় নাই। অনেক চেষ্টা করেও ছেলে-মেয়েদের ঘরে রাখা যাচ্ছে না। টিকটক ফান ভিডিওর নামে তারা গ্রামে অশ্লীল কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।’
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলি বলছিলেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ঈম্বরদেবত্তর গ্রামের বৃদ্ধ মফিজ সরকার।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার ঈশ্বরদেবত্তর (কালাইডাঙ্গা) গ্রামের রজব আলীর ছেলে মতিউর রহমান মিঠন। মাহা ফান টিভি ও বিজি ফান এলাটডি নামে দুইটি ইউটিউব চ্যানেল এবং বিভিন্ন নামে ফান ভিডিও চ্যানেল খুলে সেই সব চ্যানেলে অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের অশ্লীল ভিডিও প্রচার করছে মিঠন। গ্রামের দক্ষিণ পার্শ্বের কয়েক একর জায়গা জুড়ে তৈরি করা রয়েছে তাদের আখড়া। সেখানে মাগুরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সের মেয়েদের নিয়ে প্রকাশ্যে ফান ভিডিও তৈরি করা হলেও অভিযোগ রয়েছে ফান ভিডিও’র পেছনে রয়েছে মাদক, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে অশ্লীলতাসহ আরো অনেক অবৈধ কারবার। গ্রামের অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ওই সমস্ত কাজে তাদের লাগিয়ে দিচ্ছে সে। এ ব্যাপারে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জানলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মতিউর রহমান মিঠনের আখড়ায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ সময় সেখানে অল্প বয়স্ক ৬/৭ জন মেয়েদের দেখা যায়। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের হবে। সেখানে ছিল কিছু অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ কথা বলতে চায়নি।
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা এমাজ উদ্দিন বলেন, গ্রামের মেয়েদের আমাদের আর বিয়ে দিতে হয় না। তারা নিজেরাই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নেয়। টিকটক সমাজটাকে একেবারে নষ্ট করে দিল। কোথাও গিয়ে প্রতিকার হয় না।
একই গ্রামের যুবক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তারা তো অনেক গরীব পরিবারকে সাহায্য করছে। যারা টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারে না। তারা লেখাপড়া না করে মিঠনের সঙ্গে টিকটকে যুক্ত হয়েছে। তবে একদিক দিয়ে উপকার হলেও সমাজের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওবাইদুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, টিকটকে যা হচ্ছে তা মূলত বাস্তবতা বিবর্জিত। সস্তা জনপ্রিয়তার নামে এমন আসক্তি ভয়াবহ। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআইএইচ
