সরকারি বিদ্যালয়ের ভবন যমুনায় বিলীন

পঞ্চম দফায় যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনার ভাঙনের তাণ্ডব চলছে। মঙ্গলবার সকালে তীব্র স্রোতের কারণে ৮০ নম্বর চাঁদপুর সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের একটি ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আরেকটি নদীর পাড়ে ঝুলে আছে। যেকোনো সময় চলে যাবে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত।
এ ছাড়া চারটি গ্রামে ভাঙন চলছে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো যথাসময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন জানা যায়, চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এ ছাড়া নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় তীব্র স্রোতের কারণে দেওয়ানতলা, সংকরহাটি, গাবেরপাড়, মাঝগ্রাম সদিয়া ও চাঁদপুর গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। বিশেষ করে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন মঙ্গলবার সবার চোখের সামনে নদীর পেটে চলে যায়। আরেকটি ভবনে ঝুলে আছে। যেকোনো সময় সেটিও নদী গিলে খাবে। একাডেমিক ভবন নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। একারণে বিদ্যালয়টির প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম, সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন জানান, বিদ্যালয় ভবন আমাদের চোখের সামনে বিলীন হলেও করার কিছু নেই। পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার বলেও স্কুলটি রক্ষা হলো না। যদি এখানে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ করে দিত তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এখন দ্রুত একটি ঘরের ব্যবস্থা না হলে শিক্ষার্থীরদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও রেখা খাতুন জানান, স্কুল ঘর নদীতে চলে গেল। এখন আমরা পড়াশোন করব কোথায়। আমরা একটা ঘর চাই। আবার স্কুলে যেতে চাই।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য রমজান আলী শেখ জানান, চাঁদপুরসহ প্রায় চারটি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। আজ স্কুল বিলীন হলো। হুমকিতে আরেকটি হাই স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। এত কিছুর পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কর্তকর্তাদের দ্বায়সারা বক্তব্য। তাদের পরিদর্শন ও আশ্বাসে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। আর কত বাড়ি ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর পেটে গেলে স্থায়ী বাঁধের কাজ হবে। যদিও এর আগে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটার যথাযথ কাজ না হওয়ায় ভাঙন চলমান রয়েছে। এজন্য পাউবা কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের লোকজন দায়ি।
এ বিষয়ে সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ জানান, ভাঙন রোধে শুনেছি একটি প্রকল্প অনুমোদন হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চারটি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। এজন্য পাউবো কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি রয়েছে। দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানান তিনি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, গত এক সপ্তাহে চাঁদপুর, রেহাই মৌশা, চর মুরাদপুর, মিটুয়ানী এই পাঁচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ও যমুনায় বিলীন হয়েছে। সেখানে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলাম, নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে পাঠদানের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আশা করছি দুই-তিনের মধ্যে পাঠদান স্বাভাবিক হবে।
ভাঙন তদারকির দায়িত্বে থাকা সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিল্টন হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
এজন্য সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের বক্তব্য নিতে তার মোবাইলে কল দিলেও পাওয়া যায়নি।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার বেড়া কৈতলা নির্মাণ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা জানান, বন্যা ও নদীতীর ক্ষয়ের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিনিয়োগ কর্মসূচি (এফ.আর.ই.আর.এম.আই.পি) প্রকল্প-২ এর আওতায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের মেহের নগর থেকে এনায়েতপুর বাঁধ পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় আন্ডার ওয়াটার ওয়েব প্রটেকশন কাজ করা হবে। এজন্য জিও ব্যাগ নিক্ষেপ কাজ করা হবে। তবে বর্তমানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তের কার্যক্রম চলছে। ভাঙনের এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে।
এসএন
