রামেকে ইনচার্জের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করায় শাস্তি!

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড ইনচার্জের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে শাস্তির মুখে পড়েছেন চারজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। কোনো তদন্ত কমিটি না করে এক তরফাভাবে চার নার্সের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সেটা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের থেকে নেওয়া অবৈধ টাকা। অবৈধ টাকার হিসাবের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ওয়ার্ড ইনচার্জ ও নার্সদের দ্বন্দ্ব। এ ছাড়া অসদাচারণেও অভিযোগও রয়েছে। দুটি গ্রুপ একে অন্যের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছে না। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর রামেকের হৃদরোগ বিভাগের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ চায়না পরভীনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও অসদাচারণের অভিযোগ আনেন ওয়ার্ডের সাধারণ নার্সরা। অভিযোগের কপি রামেক পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিবের কাছে পাঠানো হয়। ওই অভিযোগে ওয়ার্ডের ১১ জন নার্স স্বাক্ষর করেন। যেখানে চারজন সিনিয়র স্টাফ নার্স মূল অভিযোগকারী এবং ৭ জন সাক্ষী হিসেবে ছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের রোগী প্রতি ইসিজি ফি ৮০ টাকা। সার্ভিস চার্জ ৮ টাকা। মোট ৮৮ টাকা আদায়ের বিধান থাকলেও ইনচার্জ ৯০ টাকা আদায়ে বাধ্য করেন। অতিরিক্ত ২ টাকা ইনচার্জ রাজস্বখাতে জমা না করে নিজের কাছে রেখে দেন। কোনো নার্সিং কর্মকর্তা রোগীকে ২ টাকা ফেরত দিতে চাইলে ইনচার্জ গালাগালি করেন। আর ২ টাকা যারা তাকে দেবে না তাদের হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। এ ছাড়াও ওয়ার্ডে পেস মেকার বসানো হলে কোম্পানি প্রতিনিধি রোগী প্রতি ৫০০ টাকা করে ডিউটিরত নার্সিং কর্মকর্তাদের নাস্তাবাবদ দিতেন। কিন্তু বিগত ২ বছরে প্রায় ৮৪ হাজার টাকা নার্স ইনচার্জ আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো তদন্ত কমিটি না করে একতরফাভাবে অভিযোগকারী নার্সদের অন্যায়ভাবে অন্যত্র স্থানান্তরের অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সাধারণ নার্সদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
অভিযোগ তুলে শাস্তির মুখে পড়া নার্সরা হলেন- জাকিয়া সুলতানা, হাসনা হেনা, রুপালী খাতুন ও ইব্রাহিম। এদের মধ্যে তিন নারী নার্স ওই ওয়ার্ডে ১৫ বছর এবং ইব্রাহিম ১০ বছর একটানা দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযোগ তোলার পর জাকিয়া সুলতানাকে শিশু বিভাগের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে, রুপালি খাতুনকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে, হাসনা হেনাকে নাক, কান ও গলা বিভাগের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ইব্রাহিমকে জরুরি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে কার্ডিওলজির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স। রুপালি খাতুন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ক্যাথ ল্যাবে ছিলেন। ক্যাথ ল্যাবের ওপর তিনি সরকারি খরচে জাপান থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক নার্স বলেন, ওয়ার্ড ইনচার্জ কথায় কথায় খারাপ আচরণ করেন। রোগীদের সামনে গালাগালি করেন। ওই ওয়ার্ডে সবকিছুতে তিনি একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন। এর সুষ্পষ্ট প্রমাণও আছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগের তদন্তে কোনো কমিটি না করেই একতরফাভাবে ইনচার্জের পক্ষ হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেটা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে রামেকের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি জানান, তিনি অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন। তবে বিষয়টি সর্ম্পকে জানেন। এটা খুবই দুঃখজনক যে, একজন নার্স আরেক জন নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তবে যেহেতু লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে; এর সত্যতা নিশ্চিতে একটা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। তদন্ত না করেই অভিযোগকারীদের সরিয়ে দেওয়া নিয়মসঙ্গত হয় না।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড ইনচার্জ চায়না পারভীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার সত্য-মিথ্যা যাইহোক, আপনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়।
এ বিষয়ে রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, মেডিকেলের ওই নার্সরা জানেনই না তারা কোন বিষয়ে অভিযোগ করতে পারেন। কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেওয়া টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই টাকা নেওয়াই তো অবৈধ। এ ছাড়া অসদাচারণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি আসলেও খারাপ দেখায়। তবে তারা দুই পক্ষ একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে চায় না। এ কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আইসিইউ থেকে একরকম জোর করে চায়না পরভীনকে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি অনেক দক্ষ। ওই সময় অন্যকেউ দায়িত্ব নিতে চায়নি। আর তিনি আর মাত্র ২-৩ মাস আছেন। এরপর অবসরে চলে যাবেন। তিনি চলে গেলে স্থানান্তরিত নার্সদের ওই ওয়ার্ডে ফিরিয়ে আনা হবে। আর এখানে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ওই ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত দক্ষতা সম্পন্ন নার্স আছেন।
এসএন
