এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ ও ধর্ষণ: সেই প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পলাতক আসামি প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে গাজিপুর জেলার কালিয়াকৈড় থানার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন হর-তকীতলা গ্রামের মমিতা হোটেলের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে নাটোর র্যাব সদস্যরা।
বুধবার (১২ অক্টোবর) সকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাটোর র্যাব অফিসের কোম্পানী কমান্ডার এএসপি ফরহাদ হোসেন।
তিনি জানান, র্যাব হেডকোয়ার্টার্স গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ওই আসামির নাম ফিরোজ আহমেদ (৪৮)। তিনি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর এলাকার মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা এবং একই এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে।
প্রসঙ্গত, গত ১ অক্টোবর একই বিদ্যালয়ের ওই এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা হল থেকে ডেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে রাজশাহীতে আগে থেকে ঠিক করে রাখা একটি বাসায় নিয়ে যায় ওই শিক্ষক। এরপর দুইজন অস্ত্রধারী ব্যক্তির সামনে ওই শিক্ষার্থীকে ভয় দেখিয়ে তাকে শিক্ষক ফিরোজ আহমেদের সঙ্গে ৬ তারিখ পর্যন্ত থাকতে বলা হয়। সেই সঙ্গে তাকে বলতে বলা হয়-সে নিজ ইচ্ছায় তার সঙ্গে এসেছে, তাদের ১ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এসব কথা না বললে তাকে সহ তার বাবা-দুলাভাইকে মেরে ফেলা হবে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর সেখানে তার বাবা-চাচারা পৌঁছালে তাদেরও মারধর করে ফিরোজ আহমেদ। এরপর মেয়েটির বাবা থানায় গেলে তাকে নিয়ে অন্য এক বাসায় যায় ফিরোজ। এরপর ওই বাসায় তাকে ভয় দেখিয়ে তিন বার ধর্ষণ করে সে। এ সময় তার মেয়ের বয়সী বলেও ওই শিক্ষার্থী রক্ষা পায়নি বলেও জানান ভুক্তভোগী।
এ ঘটনায় ওই শিক্ষক ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। এর পরদিন (২ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে নিজ এলাকায় পৌঁছালে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করলেও আসামিরা পালিয়ে যায়। এরপর ভুক্তভোগীর মেডিকেল টেস্ট এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
ওই শিক্ষার্থীর বাবা জানান, একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে তার মেয়ের যে ক্ষতি করেছেন তা অপূরণীয়। ওই আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তার সহযোগী অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরীফ জানান, ওই শিক্ষক একজন সাবেক বিএনপি নেতা। তিনি এর আগে দুটি নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপির মনোনীত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। আগে থেকেই এলাকায় তিনি এতই প্রভাবশালী যে তার কথার কেউ প্রতিবাদ করলে বা তার কথার বাইরে কথা বললেই তাকে মারধর করতেন তিনি। তার বিষয়ে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের ডিস্টার্ব করারও গুঞ্জন রয়েছে।ওই ঘটনার পর ওই বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চিন্তিত, লজ্জিত আর অপমানবোধ করছেন।
তিনি আরও জানান, স্কুল খুললে সবাই বিদ্যালয়ে যাবে বা অভিভাবকরা পাঠাবেন কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়৷ ওই শিক্ষকের শাস্তি না হলে যারা ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছে তারাও অনিরাপদ হবে এমন ভয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
ধর্ষক প্রধান শিক্ষকের গ্রেপ্তারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেছেন এই উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা।
গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ জানান, ওই শিক্ষক আগের কমিটিতে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে বর্তমান কমিটিতে তিনি নেই। তাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বিএনপি নেতা দাবি করেন, অন্যায় করে কারও পার পাওয়া উচিৎ নয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুরুদাসপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামান জানান, ইতিমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের এসএসসি কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব থেকে ওই শিক্ষককে অব্যহতি দিয়েছেন উপজেলা পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তার হোসেনসহ তিনিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি আব্দুল হাই জানান, ওই ঘটনার পর পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিনিয়র শিক্ষক ফরিদা খাতুনকে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত আড়াই শতাধিক ছাত্রী রয়েছে। ওই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিন ও আইও এসআই মাজহারুল ইসলাম জানান, ওই শিক্ষককে তাদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারেরও চেষ্টা চলছে।