আক্কেলপুর স্টেশনে নারী পকেটমারের দল গ্রেপ্তার
হামিদা বেগম, রিপন আখতার, রোজিনা বেগম, মর্জিনা বেগম ও লিজা আখতার মিলে পাঁচজন গড়ে তুলেছেন পকেটমারের দল। তারা রেলওয়ে স্টশনে, ট্রেনের ভেতর, হাসপাতালে গিয়ে কৌশলে পুরুষ মানুষের পকেট ও নারীদের ব্যাগ থেকে টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন নেন তাঁরা। পাঁচ সদস্যের নারী পকেট দলের সবাই ধরা পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় রাজশাহীগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে নামিয়ে দ্রুত পালানোর সময় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলস্টেশনে তাঁদের আটক করা হয়। স্টেশন মাটারসহ স্টেশনের অন্য কর্মচারীরা তাঁদের করেন।
এরপর রেলস্টেশনে ভ্রাম্যমান আদালতে বসিয়ে দুই জনের সাত দিনন করে কারাদণ্ড ও তিন জনের দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস, এম হাবিবুল হাসান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।
সাত দিনের কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হামিদা বেগম (২৭) ও রিপন আখতার (২৮)। অর্থদণ্ড প্রাপ্ত হলেন, রোজিনা বেগম (২৫), মর্জিনা বেগম (২৫), লিজা আখতার (২৩)।
এর মধ্যে রোজিনা বেগমের এক হাজার টাকা অন্য দুই জনের পাঁচশ টাকা। জরিমানার টাকা আদায়ন করে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের তিন জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ডরমন্ড গ্রামে।
ভ্রাম্যমান আদালত, থানা পুলিশ ও রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এই পাঁচ নারী পকেটমার দলের দলনেতা রিপন আখতার। তিনি তাঁর আপন দুই বোন রোজিনা বেগম ও হামিদা বেগমকে নিয়ে প্রথমে এই দল গঠন করেন। এরপর আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লিজা আখতার ও ফুফাতো বোন মর্জিনা আখতারকে দলে নেন। পাঁচ সদস্যের নারী পকেটমার দলের সদস্যরা সারা দেশ চষে বেড়ান।
তাঁরা রেলস্টেশন, ট্রেনের ভেতর ও হাসপাতালে পুরুষদের পকেট মারেন ও নারীদের ভেনিটি ব্যাগ থেকে নগদ টাকা, স্বার্ণালংকার ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে আক্কেলপুর রেলস্টেশনে এক নারী ট্রেনযাত্রীর স্বার্ণালংকার খোয়া যায়। রেলস্টেশনের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে বোরখাপড়া ৪-৫ জন নারীকে ওই স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
ওই ঘটনার রেলস্টেশনের মাস্টার ও কর্মচারীরা রেলস্টেশনে সংঘবদ্ধ নারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। পাঁচ জন নারী এক সপ্তাহ ধরে জয়পুরহাটের দিক ট্রেন এসে আক্কেলপুর রেলস্টেশনে নেমে আবার রির্জাভ ইজিবাইক নিয়ে জয়পুরহাটে যাচ্ছিলেন। এতে রেলস্টেশন মাস্টার খাদিজা খাতুন ও রেলস্টেশনের কর্মচারীদের সন্দেহ হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে নেমে ওই পাঁচ নারী জয়পুরহাট যাওয়ার জন্য ইজিবাই রির্জাভ করছিলেন। তখন রেলস্টেশন মাস্টার খাদিজা খাতুন ও রেলস্টেশনের কর্মচারীরা তাঁদের ডেকে রেলস্টেশন মাস্টারের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
তাঁরা লোকজনের উপস্থিতিতে রেলস্টেশন স্টেশন মাস্টারকে জানান, তাঁরা রাজশাহী যাচ্ছিলেন। ট্রেন ভিড় থাকায় আক্কেলপুর রেলস্টেশনে নেমে জয়পুরহাটে দিকে রওনা হয়েছিলেন। তাঁরা কেউই ট্রেনের টিকিট করে আসেননি। তাঁদের অসংলগ্ন কথাবার্তায় স্টেশন মাস্টার ও উপস্থিত লোকজনের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। তখন তাঁদের দলনেতা রিপন আখতার রেলস্টেশন, ট্রেনের ভেতর ও হাসপাতালে পকেট মারার কথা স্বীকার করেন। তখন থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে খবর দেওয়া হয়।
ইউএনও ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমান আদালত বসান। পাঁচ নারী ভ্রাম্যমান আদালতে পকেট মারার কথা স্বীকার করেন। এরপর ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস,এম হাবিবুল হাসান দুই নারীর পকেমারের সাত দিন করে কারাদণ্ড ও তিন জনের দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন।
আক্কেলপুর রেলস্টেশন মাস্টার খাদিজা খাতুন বলেন, কয়েক দিন আগে রেলস্টেশনে এক নারী ট্রেনযাত্রীর স্বার্ণালংকার খোয়া যায়। রেল স্টেশনের সিসি টিভি ক্যামেরায় পাঁচ জন নারীকে এ ঘটনা ঘটাতে দেখে গেছে। এরপর আমার রেলস্টেশনে অপেক্ষামান যাত্রী ও ট্রেনযাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করছিলাম।
এই পাঁচ নারী জয়পুরহাট থেকে ট্রেনে এসে আক্কেলপুর রেল স্টেশনে নেমে আবার ইজিবাইকে জয়পুরহাটে যাচ্ছিলেন। একইভাবে আজকে যাওয়ার তাঁদের পাঁচ জনকে ডেকে আনা হয়। তাঁরা রেলস্টেশন, ট্রেনের ভেতর ও হাসপাতালে পকেট মারার কথা স্বীকার করেন। ইউএনও স্যার এসে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে দুই জনের কারাদণ্ড ও তিন জনের জরিমানা করেছেন। পাঁচ জনের নারী পকেটমার দলে আপন তিন বোন তাঁদের ভাবী ও একজন ফুফাতো বোন রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস,এম হাবিবুল হাসান ঢাকা প্রকাশকে বলেন, পাঁচ নারী পকেটমার দলের সদস্যের মধ্যে একজনের ছোট শিশু রয়েছে। অন্য দুই জনের অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
দলনেতাসহ দুই জনকে সাত দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এরা মূলত রেলস্টেশন, ট্রেন ভেতর ও হাসপাতালে টার্গেট করেন। পাঁচ জনের মধ্য চার জন ভিড় করে একজন পুরুষের পকেট আর নারীদের ব্যাগ থেকে নগদ টাকা, স্বার্ণালংকার ও মোবাইলফোন তুলে নেন। এরা পাঁচ জন একই পরিবারের সদস্য বলে জানিয়েছেন।
এএজেড