রাজশাহীতে চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব
রাজশাহীতে হঠাৎই চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চোখের কনজাংটিভা নামক পর্দার প্রদাহের এই রোগটি ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে হওয়ার ভীতি ছড়িয়েছে সর্বত্র। গত সপ্তাহখানেক থেকে নগরীসহ গ্রামাঞ্চলেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করে বলছেন, ভয়ের কিছু নেই, এটি ভাইরাসজনিত হলেও করোনা বা মহামারীর মতো ভয়ংকর নয়। কিছু বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন করলেই সপ্তাহখানেকের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর এলাকার বাসিন্দা জমেলা বেগম জানান, তার মেয়ের পাঁচ দিন আগে চোখ ওঠে। সামান্য ব্যাথা ছিলো। ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে এসেছেন। তবে দুই দিন আগে তার ছেলের মেয়ে সন্তানেরও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। তিনি আরও জানান, সপ্তাহখানেকের মধ্যে তার এলাকার চার জন শিশু চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত নগরীর রানীনগরের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান বলেন, তিনি নিজের চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ দেখার পর ক্লোরাফিল নামক একটি ড্রপ ডাক্তারের পরামর্শে ফার্মেসিগুলোতে পাননি। মার্কেট আউট হয়ে গেছে। পরে এর বিকল্প একটা ওষুধ ফার্মেসি থেকে দিয়েছে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়। আবার কখনো কখনো অ্যালার্জির কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। যে মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়। সাধারণত কন্টাক্টের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। যেমন: রোগীর ব্যবহৃত জিনিস (গামছা, তোয়ালে, রুমাল) অন্যরা ব্যবহার করলে এ রোগ ছড়ায়। আবার হ্যান্ড টু আই কন্টাক্টের (হাত না ধুয়ে চোখ ছুঁলে) মাধ্যমেও ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয়। এ কারণে দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. নাইমুল হক বলেন, এটা মৌসুমি রোগ। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তিনি বলেন, এই রোগে চোখ লাল হয়ে যায়। সাধারণত প্রথমে এক চোখ লাল হয়, পরে দুই চোখই হয়৷ চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখে অস্বস্তিবোধ হয়, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, চোখে ব্যথা, আলো সহ্য না হওয়া, চোখে হালকা জ্বালাপোড়া হওয়া এসব লক্ষণ দেখা যায়।
সাধারণত এমনিতেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে প্রয়োজনে কিছু ড্রপ রোগীকে দেয়া হয়। আর রোগীকে হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবে না। বাইরে বের হলে রোগীকে কালো চশমা পরতে হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, শুধু রাজশাহী না, সারাদেশেই চোখ ওঠা রোগের পাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সাধারণত এমনিই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছ থেকেই পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
তিনি আরও বলেন, তারা এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে, আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলায় প্রচারণা চালাচ্ছি। গত ৩ অক্টোবর বিভাগীয় পর্যায়ে চোখের যত্ন বিষয়ে সেমিনারও করা হয়েছে। এছাড়া রোগীর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার জন্য ইউনিয়ন-উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
এএজেড