শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত শরিফুলের শোকে স্তব্ধ বেড়াখারুয়া
শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন কালে বোমা বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য শরিফুল (২৪)। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বেড়াখারুয়ায় চলছে শোকের মাতম। বুধবার দুপুরে দিকে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল ওই বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জানাতে এসেছিলেন।
সরেজমিন দেখা যায়, শহীদ শরীফুলের বাড়িতে নারী-পুরুষের ভিড়। কেউ কাঁদছে, কেউ অন্যকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করছে। তবে মা আনজু আরা বেগম (৪১) নির্বাক হয়ে পড়ে আছেন। আর বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন বাবা লেবু শেখ (৬২)। অকালে সন্তান হারানোর শোক যেন কোনোভাবেই সইতে পারছে না মা-বাবা। এমন করুণ অবস্থা এখন ওই পরিবারের সবারই।
পরিবারের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও। শরীফুলের মা মাঝে মাঝে অস্পষ্ট কণ্ঠে শুধু বলছেন, তোমরা আমার শরীফুলকে আইনা দাও, এইভাবে সে চইলা যাইতে পারে না। মিশন থেকে এসে এক মাত্র বোনকে বিয়ে দেবে। বাড়িতে কত কিছু করবো। কইতনা স্বপ্ন ছিল। এখন আমাদের এসব স্বপ্ন কে পুরন করবে? শরিফুলকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পাড়মু না। সন্তানের মৃত্যুর পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
শরিফুলের বাবা লেবু শেখ ঢাকা প্রকাশকে জানান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরনে আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। ছেলের সাথে সব শেষ গত ১৫ দিন আগে কথা হইছে। তখন একমাত্র ছোট বোনকে ভাল পাত্রস্থ করতে সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হবে, এজন্য কোন চিন্তা করতে মানা করেছে। মিশনের সব অর্থ দিয়ে হলে ভাল ছেলের সাথে বোনকে বিয়ে দেয়াটা তার প্রধান স্বপ্ন ছিল।
এদিকে শরিফুলের নববিহাহিত স্ত্রী সালমা (১৮) ঢাকা প্রকাশকে জানান, আমি এখন কি নিয়ে থাকবো। আমার এখন কি হবে। কত স্বপ্ন ছিল আমাদের। বলতে বলতে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে। একই অবস্থা একমাত্র ছোট ভাই কাউসারের (২২)। সে এসএসসি পাশ করে সৈনিকে চাকুরির আশায় বহু চেষ্টা করেছে। আর ছোট বোন লাখি খাতুন (১৮)। খামারগ্রাম কলেজে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছে। তারাও বড় ভায়ের মৃত্যুও খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
এছাড়া শরিফুলের চাচা মাহদুল হাসান ঢাকা প্রকাশকে বলেন, শরিফুল ছোট বেলা থেকেই অনেক মেধাবী ও পরিশ্রমি ছিল। সে তাঁতের কাজও করে পড়াশোন করেছে। তার বাবাও তাঁত শ্রমিক ছিল। শরিফুল চাকুরি নেবার পর বাবা বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় শ্রমিকের কাজ ছেড়ে দিয়েছে। এখন শরিফুলই ছিল একমাত্র অবলম্বন। তবে ছেলে নিহত হওয়ায় এখন বাড়িতে কর্মক্ষম কেউ নেই। তার ছোট বোন বিয়ের উপযুক্ত। মিশন শেষে বোনকে বিয়ে দেবার কথা ছিল। তবে শরিফুলের ছোট ভাইকে যদি কোন সরকারী চাকুরির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে হয়তো বৃদ্ধ বাবা-মা শেষ বয়সের দিন গুলি ছেলে হারানোর কষ্ট বুকে নিয়েও দিনপাড় করতে পারবে।
শরীফুল ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মিশনে যাওয়ার ৬ মাস আগে বিয়ে করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরীফুল সবার বড়। মিশন থেকে ফিরে একমাত্র বোন লাকী খাতুনের বিয়ে দেবার কথা ছিলো। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের ২ তারিখে মিশনে গিয়েছিলেন।
এএজেড