প্রথমবারের মতো বগুড়ায় অনুষ্ঠিত হল কুমারী পূজা
সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা বগুড়ার শাজানপুরে শারদীয় দুর্গাপূজায় মহা অষ্টমীতে এই প্রথম কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টায় উপজেলার গ-গ্রাম এলাকার শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে সনাতন (হিন্দু) ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ, বয়-বৃদ্ধর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে পূজা মন্ডপ। সনাতন ধর্মের মানুষ ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের মানুষও কুমারী পূজা দেখার জন্য মন্দির প্রাঙ্গনে ভিড় জমায়।
সনাতন (হিন্দু) শাস্ত্রমতে, কুমারী পূজার উদ্ভব হয় অসুরকে বধের মধ্য দিয়ে। অসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকী বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হয়। সে সব দেবগণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারী রূপে অসুরকে বধ করেন। এরপর থেকে মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।
বগুড়ায় প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত কুমারী পূজার জন্য মার্ত ভাবের পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে এবছর কুমারী মায়ের আসনে বসানো হয় ৮ বছর বয়সী শুভ শ্রী রাণী দাসকে। কুমারীর বয়স ৮ বছর হওয়ায় কুষ্ঠিকা নামে পূজিত হয়। পূজা কার্যক্রম পরিচালনা করেন আশ্রমের পুরোহিত বাসুদেব ব্যানার্জী।
মন্ডপে পূজা দেখতে আসা শ্রীমতি আনিতা দেবনাথ এ প্রতিবেদক-কে বলেন, এক সময় টিভির পর্দায় কুমারী পূজার দৃশ্য দেখেছি। বাস্তবে কোথাও কুমারী পূজা দেখা হয়নি। আজ বগুড়ায় এই আশ্রমে বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য হলো। বাস্তবে দেখে অনেক ভাল লাগলো এই পূজার মাধ্যমে নারী শক্তির জয় হোক এই কামনায় করি।
আশ্রমের পুরোহিত উপস্থিত পূজার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী। মুলত নারীকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে কুমারী পূজা করা হয়। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তব কুমারী পূজা। কুমারী পুজায় অধিষ্ঠিত শুভ শ্রীর মা শ্রীমতি সরস্বতী এ প্রতিবেদক-কে বলেন, আমরা নারীরা সম্মানিত বোধ করছি। মেয়েরা নানা সময় যে বঞ্চনার শিকার হয় মাতৃ বন্দনার মধ্য দিয়ে যেনো সেই অসুর প্রবৃত্তির বিনাশ ঘটে।'
বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছেন, এ বছর বগুড়ায় ১২টি উপজেলায় ৬৯০ মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫০টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ২৪০টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৮৯টি সাধারণ। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও মন্দির কমিটির পক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আগামী বুধবার বিজয়া দশমীর মাধ্যমে দুর্গোৎসব শেষ হবে। সনাতন ধর্মালম্বীদের পুরান অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে এসেছেন গজে চেপে আর যাবেন নৌকায়।
এএজেড