ফ্রিজিয়ান গরু পালনে স্বাবলম্বী জয়পুরহাটের আমিরুল
বিদেশি জাতের গরু পালন করে অনেক বেকার যুবক সফলতার মুখ দেখছেন। অনেকেই আবার গড়ে তুলেছেন বড় বড় গরুর খামার। এরই ধারাবাহিকতায় গরু পালনে স্বাবলম্বী হয়েছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার যুবক আমিরুল ইসলাম মৃধা (৩০)।
জয়পুরহাট কালাই পৌরসভার থুপসারা মহল্লার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আমিরুল ইসলাম মৃধা। এই যুবক অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে প্রতিদিন তার চারটি গরু থেকে দুধ হয় ৮ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় ৩০ টাকা দরে।
জানা যায়, তার বয়স যখন ১৯ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। বাড়ির সাড়ে তিন শতক জমি আর মাটির তৈরি একটি ঘর এবং একটি বাছুর ভাগে পান। এটি পালনের পাশাপাশি অন্যের কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষ করতেন। তা দিয়েই দিন বদলের সংগ্রামে সফল হন তিনি। এখন তার গোয়াল ভরা গরু। আছে পাকা বাড়ি। কিনেছেন সাড়ে আট বিঘা ধানি জমি। আছে দুটি পাওয়ার টিলার। একটি মোটরসাইকেল। একসময় অন্যের বাড়িতে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা ব্যক্তির নাম আমিরুল ইসলাম মৃধা।
আমিরুল বিয়ে করেন ২৩ বছর বয়সে। তার স্ত্রী জরিনার সম্মিলিত চেষ্টায় সংসারে উন্নতি বেগবান হয়। গরুর দুধ বিক্রি আর বর্গা নেওয়া জমির আয় থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে থাকেন তারা। এখন তাদের চাষযোগ্য নিজস্ব জমির পরিমাণ সাড়ে ৮ বিঘা। পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা নিয়েছেন ৩০ বিঘা। অর্থাৎ তিনি এখন মোট সাড়ে ৩৮ বিঘা ধানি জমি চাষ করছেন।
আমিরুল ইসলাম জানান, অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি। শুধু সাক্ষরজ্ঞান আর টাকার হিসাব শিখেছেন। তিনি যখন ছোট তখন তার বাবা হাজের আলী মৃধা অসুস্থ ছিলেন। মা আইমা বেগম তখন অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। সেই রোজগারে বাবা, দুই ভাই আর এক বোনের মুখের আহার জোটাতে হতো।
এদিকে গাভি পালনের জন্য আমিরুল স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ঋণের টাকায় বাড়িতে করেছেন ছোট ডেইরি ফার্ম। সেই টাকাও প্রতি মাসে কিস্তিতে দিচ্ছেন। তার ফার্মে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরু আছে ছয়টি।
আমিরুল ইসলাম আরও জানান, জমি চাষ, গাভি পালন ও পাওয়ার টিলার থেকে তার ভালো রোজগার হয়। এখন তিন ছেলে আর এক মেয়ে সন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করাটাই তার লক্ষ্য।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন , ‘এটি একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এ উপজেলার মানুষ শুধু গরু পালন করেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এতে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের গরু পালনের জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য ক্ষুদ্র ও বড় খামারি এবং সাধারণ গরু পালনকারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের সনদ ও সেবা কার্ড দেওয়া হয়। জেলার অনেকেই এখন গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমিরুল ইসলাম তাদেরই একজন।’
এসএন