হাত নেই, পা দিয়ে লিখে দাখিল পরীক্ষা
জন্ম থেকেই নেই কোনো হাত। নেই ডান পাও। আছে শুধু বাম দিকের পা তা আবার স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট। ছোট বেলা থেকেই তাকে গোসল করিয়ে দেন মা। ওই এক পায়ে মাটিত ঠেস দিয়েই চলাচল করে সে। খাবার খায় ওই পায়ের আঙ্গুল দিয়ে চামচ ধরে। কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর সে স্কুলে ভর্তি হতে চায়। তার অদম্য ইচ্ছায় সায় দিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন কৃষক বাবা। ইতিমধ্যে পিইসি আর জেডিসি পাস করেছে ওই প্রতিবন্ধী রাসেল। এবার দিচ্ছেন দাখিল পরীক্ষা। মাথায় টুপি আর হাতা ছাড়া পাঞ্জাবী পড়ে পরীক্ষা হলে আসে সে। পায়ের আঙুল দিয়ে কলম চেপে ধরে লিখছে পরীক্ষায় খাতায়।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সিংড়া পৌর এলাকার শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় এভাবেই অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তাকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী এই পরীক্ষার্থীর বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার শোলাকুড়া গ্রামে। বাবা-মার দুই সন্তানের মধ্যে রাসেল ছোট।
দুই ছেলের বাবা রহিম মৃধা জানান,তার বড় ছেলে গোলাম রাব্বী মৃধা দাখিল পরীক্ষার আগেই পড়া বাদ দিয়েছে। বর্তমানে রাব্বী ইলেক্ট্রিক ওয়্যার মিস্ত্রী হিসাবে কাজ করে। তার নিজের সামান্য কৃষি জমি রয়েছে। এর পাশাপাশি মানুষের জমিতে কাজ করেন তিনি। অভাব-অনটনের সংসারেও রাসেলের পড়ালেখায় আগ্রহ দেখে তিনি সাধ্যমতো সহযোগিতা করছেন। রাসেল কামেল পাশ করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে কোনো চাকরি করে জীবনযাপন করবে এমনই প্রত্যাশা তার।
আজ সকাল ১১টার পর ওই পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যান ইউএনও এস এম সামিরুল ইসলাম। এ সময় রাসেলের লেখা দেখে মুগ্ধ হন তিনি।
পরীক্ষা শেষে রাসেল মৃধা জানান,তিনি কোরআন মাজিদ বিষয়ে পরীক্ষা দিলেন। পরীক্ষা ভালো হয়েছে জানিয়ে অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো যাতে ভালো দিতে পারেন সেজন্য সকলের দোয়া চান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে রাসেল জানান,তিনি কামেল পাশ করে ভালো কোনো সরকারি চাকরি করে বাবা-মার মুখে হাঁসি ফোটাতে চান।
এ ব্যাপারে শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোতাররফ হোসেন বলেন, রাসেল মৃধা এ বছর আমার প্রতিষ্ঠান থেকে দাখিল পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। বিগত পরীক্ষাগুলোতেও সে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা আশাবাদী রাসেল এবারও ভালো ফল অর্জন করবে।
এসআইএইচ