নওগাঁ জেলা পরিষদে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?
নওগাঁ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ছয় নেতা। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী, তা নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থক-অনুসারীরা।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যায় দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নওগাঁসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেন।
আগামীকাল রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। ফলে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি সেটি জানতে আরও একদিন অপেক্ষা করতে হবে।
আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের দিন ধার্য্য করে। গতকাল বিকাল চারটা পর্যন্ত এ মনোনয়ন ফরম জমাদানের শেষ সময় ছিল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ছয় নেতা।
তারা হলেন, জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলে রাব্বি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, সাবেক সাংসদ শাহিন মনোয়ারা হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাভেদ জাহাঙ্গীর সোহেল ও বিভাস কুমার মজুমদার গোপাল এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদাদ খান পিটু।
জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক এ কে এম ফজলে রাব্বি বয়সে অন্যদের চেয়ে জ্যেষ্ঠ। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালে ফজলে রাব্বিকে নওগাঁ জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হন এবং একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারও তিনি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
এ কে এম ফজলে রাব্বি বলেন, ‘জেলা পরিষদের প্রশাসক ও চেয়ারম্যান হিসেবে আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য দলের কাছে আবার মনোনয়ন চেয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আস্থা রেখে মনোনয়ন দিলে আগামীতেও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘ দিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আব্দুল খালেক বলেন, ‘১৯৬৮ সালে নওগাঁ সদর থানা ছাত্রলীগের প্রচারবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাই। সেই সময় আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করার সুযোগ হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় কারাবরণও করতে হয়েছে। দলের জন্য আমার ত্যাগ ও নিষ্ঠা বিবেচনা করে আশা করি নেত্রী আমাকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেবেন।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য শাহিন মনোয়ারা হক। তিনি সপ্তম ও নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
শাহিন মনোয়ারা হক বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখে দুইবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছেন। আমি নিষ্ঠার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছি। এ ছাড়া, দীর্ঘ সময় ধরে জেলা আওয়ামী লীগের পদে থেকে দলকে সংগঠিত করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি এবং এখনও সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে নওগাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখব।’
আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জাভেদ জাহাঙ্গীর সোহেল ১৯৮৮ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৯১ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদকের পদ পান। ২০১৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে তিনি যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাভেদ জাহাঙ্গীর ২০০৯-২০১৪ সালে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাভেদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করবেন। সেই দিক বিবেচনা করে প্রার্থী নির্বাচন করা হলে আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী বিভাস কুমার মজুমদার ১৯৯১-৯২ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজে নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ২০০০ সালে জেলা ছালীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পান। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে তিনি যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
বিভাস কুমার মজুমদার বলেন, ‘দলের প্রতি আমার দীর্ঘ দিনের ত্যাগ ও নিষ্ঠা এবং কর্মঠ, সৎ ও পরিচ্ছন্ন প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করেই জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী নির্বাচন করবেন। দল আমার প্রতি আস্থা রাখলে এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করব।’
আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী খোদাদদ খান পিটু ১৯৯০-৯১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ১৯৯২-৯৭ সালে নওগাঁ সদর থানা যুবলীগের সভাপতি, ২০০৩-২০০৯ সালে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, ২০১৩-১৯ সালে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং ২০১৯ সাল থেকে জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়া, খোদাদ খান নওগাঁ জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনে একবার সাধারণ সম্পাদক এবং দুইবারের নির্বচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। খোদাদ খান বলেন, ‘জেলা পরিষদ হলো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ সংস্থা। এই সংস্থার মাধ্যমে অনেক উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব। আমার বাবা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই খান নওগাঁ জেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান (১৯৮৮-১৯৯০) ছিলেন। তার সময়ে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে অবস্থিত জেলা পরিষদ পার্ক ও বর্তমান জেলা পরিষদ ভবন তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া তিনি জেলায় বহু রাস্তাঘাট নির্মাণ করে গেছেন। দল থেকে মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে আমি জেলা পরিষদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই এবং নওগাঁর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’
আগামী ১৭ অক্টোবর নওগাঁসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর ও প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর।
এমএমএ/