ভিজিডির চালে নেওয়া হচ্ছে টাকা, পরিষদ চত্বরেই বিক্রি
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদে উপকারভোগীদের কাছে ভিজিডির (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) চাল বিতরণ করা হচ্ছে। সঞ্চয় ছাড়া উপকারভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ৩০ টাকা। এমনকি উপকারভোগীদের কাছে বিতরণের চাল পরিষদ চত্বরেই কিনে নিচ্ছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (২২ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায় পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদে। এসব অতিরিক্ত টাকা চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান ওরফে কিশোরের প্রতিনিধি হিসেবে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আদায় করছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডের ২৬০ জন ভিজিডি কার্ডধারীদের ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাল বিতরণের সময় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একজন কর্মী উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২০০ করে সঞ্চয়ের টাকা নিচ্ছেন। কোনো কোনো উপকারভোগী ১০০ টাকা করেও সঞ্চয় জমা দিয়েছেন। এরপর উপকারভোগীরা ভিজিডির কার্ড নিয়ে চাল নেওয়ার জন্য পরিষদের চাল বিতরণ কক্ষের সামনে বসা আশরাফুলের কাছে যান। সেখানে তাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে নিয়ে টিপসই নেওয়া হয়। চাল নেওয়ার পর পরিষদ চত্বরেই চাল ব্যবসায়ীরা অনেক উপকারভোগীদের কাছ থেকে চাল কিনে নিচ্ছেন। প্রতি বস্তা চাল ১১২০-১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন উপকারভোগীরা।
মালঞ্চা গ্রামের উপকারভোগী মোসলেমা চাল নিতে আসতে পারেননি। এজন্য তার চাল নিতে এসেছেন তার শ্বাশুড়ি জাহেদা। তিনি বলেন, চাল দেওয়ার সময় আগে ১৫ টাকা করে নিত, কিছু বাদ ছিল। এখন আবার ৩০ টাকা করে নেয়। আমরা কিছু বুঝি না, তাই টাকা দিই।
উপকারভোগী শিউলী বলেন, এসব চাল খাওয়া যায় না। এজন্য বিক্রি করে দেই, আজও ৩০ কেজি চাল ১১৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। অনেকেই চাল বিক্রি করেছে।
চালগুলো কিনছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এর মধ্যে মো. খলিল নামের এক ব্যবসায়ী ২০ বস্তা চাল কিনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, প্রায়ই এমন চাল কেনা হয়। পরে পরিষদ থেকে বাইরে এনে বস্তা বদল করে প্লাস্টিকের বস্তা করে অন্যত্র নেওয়া হয়। আজ ১১৫০-১১৭০ টাকা করে প্রতি বস্তা চাল কেনা হয়েছে।
মো. আজিজ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, বেশি চাল কিনতে পারিনি, ৮ বস্তা চাল কিনেছি। অনেকেই পরিষদ চত্বর থেকেই চাল কিনছেন। কেউ কিছু বলে না, তাই চাল কিনি।
সঞ্চয়ের টাকা নেওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মী সাগর হোসেন বলেন, আজ ২৬০ জন উপকারভোগীদের মাঝে ভিজিডির চাল বিতরণ করা হয়েছে। আমি সঞ্চয়ের টাকা তুলেছি এবং কার্ডে উঠিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ ২০০ টাকার বদলে ১০০ টাকাও সঞ্চয় দিয়েছেন। কিন্তু চাল বিতরণের সময় কেন অতিরিক্ত ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে তা আমার জানা নেই।
চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে ৩০ টাকা করে নেওয়া আশরাফুল ইসলাম বলেন, চাল পরিষদে আনার জন্য যে খরচ হয়, ওই খরচের জন্য এসব টাকা নেওয়া হয়। আমি পরিষদের কেউ না, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দিয়ে ডেকে এনে আমাকে টাকা তুলতে বলেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান ওরফে কিশোর বলেন, অতিরিক্ত ৩০ টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। আমি বিষয়টি জানার পর আর টাকা নেওয়া হয়নি। আর পরিষদের ভেতরে কোনো চাল কেউ কেনেননি। পরিষদ সীমানার বাইরে কেউ কিনলে আমরা কী করব?
এদিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসা. আলপনা ইয়াসমিন।
এসজি/