দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: জীবনে কষ্টের কালো ছায়া
চলমান মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নাজেহাল পাবনা অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরা। এই পরিস্থিতিতে পাবনাসহ দেশের মানুষের আয় ও ব্যয়ের যথাযত সমন্বয় হচ্ছে না। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা থেকে অনেক কিছুই বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি যেমন মধ্যবিত্তের বোবাকান্নায় পরিণত হয়েছে তেমনি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে কষ্টের কালো ছায়া।
একদিকে করোনার প্রভাবে কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে, কর্মহীন হয়েছে মানুষ, ডলার সংকটে আমদানী রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে আবার হঠাৎ করেই সরকার কর্তৃক জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি এর সাথে যুক্ত হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের অভিলাষ। সব মিলিয়ে দ্রব্যমূল্যর লাগামহীন উর্ধ্বগতীতে পাবনার নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত।
জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার পড় থেকে নিত্যপন্যর দাম এমন ভাবে বাড়ছে যেন লাগামহীন পাগলা ঘোড়া। নিত্যপন্য দ্রব্যর ব্যাবসায়ীরা কে কতটা মুনাফা করবেন এ ধরনের কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। বাজারের কোন কোন দোকানে মূল্য তালিকা টানানো থাকলেও অধিকাংশ দোকান গুলোতেই তা চোখে পড়েনা। ফলে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের এক ধরনের অসম প্রতিযোগীতা লক্ষ্য করা যায়। পাবনা বড় বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, পেঁয়াজ ও বেগুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়াও প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, ছাগলের (খাসি) মাংস ৯০০ টাকা, দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৮০ টাকা ও লেয়ার মুরগি ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছ (মাঝারি) ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, রুই, কাতলা, মৃগেল ও কার্প জাতীয় (এক কেজি ওজনের) প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, সোয়াবিন তেল (খোলা) ১৭০ টাকা, ঘানি টানা সরিষা তেল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, বিভিন্ন ডাল ১২০-১৬০ টাকা, চিনি ৯০ টাকা, শাক-সবজি (প্রকার ভেদে) ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পোল্ট্রি মুরগির ডিম খুচরা প্রতি হালি ৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। জিরাসহ সকল প্রকার মসলার দাম বেড়েছে। অধিক দামে পণ্যসামগ্রী কেনা ভুক্তভোগীদের বোবা কান্না যেন দেখার কেউ নেই।
কতটা বেড়েছে দাম?
সীমিত আয়ের পরিবারে আমিষের চাহিদা পূরনের সহজ পছন্দ ব্রয়লার মুরগি ও ডিম। তবে বিগত কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, ফার্মে উৎপাদিত মুরগির দাম প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ টাকার কাছাকাছি যা ১ মাস আগেও ছিল ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে ডিমের দাম যা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা হালী ছিল কিছুটা কমে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচাবাজারে মাছ, মাংস ও সবজির দাম নিয়মিত ওঠানামা করে। তারা এখন কালেভদ্রে গরুর মাংস কিনতে পারেন। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংসের কেজি ৯০০ টাকা। বছরের শুরুতেও যা যথাক্রমে ৫৫০-৬০০ টাকা এবং ৭০০ থেতে ৭৫০ টাকায় পাওয়া যেত।
এবার আসা যাক তেলের তেলেসমাতির কথায়। বর্তমানে বাজারে ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা যা বছরের শুরুতে ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। শুধু সয়াবিন তেল কিনতে একটি পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১২০ শতাংশ।
মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় সর্বশেষ যোগ দিয়েছে চাল এবং ময়দা। বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের এক কেজি চিকন চাল কিনতে লাগছে ৬৫ থেকে ৭৫টাকা। মোটা চালের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ময়দার দাম হঠাৎ বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪৮ টাকা।
ভুক্তভোগীরা মনে করেন বাজারে পর্যাপ্ত পন্য সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়ছে। এর কারণ গুলো অনুসন্ধান করা খুবই জরুরী। ব্যবসায়ীদের একাংশের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের কারণেই বাজারে নিত্যপন্য দ্রব্যর দাম বাড়ছে। এখেত্রে বাজার মনিটরিং ব্যাবস্থা জোড়দার করার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
এএজেড