জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে নওগাঁয় বাড়ল মোটা চালের দাম
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে মোটা চালের বাজারে। ফলে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁয় কেজিতে সব ধরনের চালে দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। এতে চরম সঙ্কটে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন খরচ ব্যয় বেড়েছে। ফলে কিছুটা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
নওগাঁর পৌর খুচরা চাল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। বর্তমানে মোটা স্বর্ণা-৫ ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল কেজিতে ৫০ টাকা। এ ছাড়াও সরু চাল জিরাশাইল কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা, কাটারি ৭২-৭৪ টাকা এবং বিআর-২৮ ৫৮-৬০ টাকায়।
চাল কিনতে আসা আব্দুর রহমান বলেন, চালসহ প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবনযাপন করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আয় বাড়েনি। প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।
একই কথা বলেন চাল কিনতে আসা স্বপন কুমার। তার পরিবারে ছয়জন সদস্য। প্রতিদিন চালের প্রয়োজন ৪ কেজি আর বর্তমান বাজারে ৪ কেজি চালের দাম ২৬০ টাকা। তিনি বলেন, ভিক্ষার থালা নিয়ে বের হলেও জীবন চলবে না।
নওগাঁ ক্ষুদ্র চাল বাজারের সাধারণ সম্পাদক নূর নবী বলেন, গত এক সপ্তাহে মোটা চালে দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি সরু চালের দামও বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো ভাতের পাশাপাশি আটা ব্যবহার করতেন। কিন্তু তারা সেই পরিমাণ আটা পাচ্ছে না। এর ফলে মোটা চালের উপর ঝুঁকেছেন নিম্নবিত্তরা। আর এ কারণে মোটা চালের দাম বেড়েছে।
নওগাঁ পৌর খুচরা চাল বাজারের চাল ব্যবসায়ী তাপস কুমার বলেন, মোকামগুলোতে মোটা চালের আমদানি খুব কম। ফলে বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করছে হচ্ছে। আবার বেশি দাম দিয়েও চাহিদা মোতাবেক চাল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন ৫ বস্তা চাহিদার তুলনায় পাওয়া যাচ্ছে ১ থেকে ২ বস্তা চাল।
নওগাঁ সদর উপজেলার মেসার্স ফারিহা রাইস মিলের মালিক শেখ ফরিদ উদ্দিন জানান, সম্প্রতি তেলের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে পরিবহন খরচ বেড়েছে অনেক। এজন্য চাহিদা অনুযায়ী মোটা চালের দাম বেড়েছে। এখানে মিল মালিকদের করার কিছু নেই।
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মানুষ সরু চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বাজারে সরু ও মোটা চালের দাম বেড়েছে। যাদের সরু চাল ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে তারা এখন মোটা চালের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে মোটা চাউল কেনার ফলে বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে সুর চালের চেয়ে মোটা চালের দাম।
তিনি বলেন, মোটা চালের চাহিদা না থাকায় কৃষকরা মোটা জাতের ধান চাষও কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে মোটা জাতের ধানের সংকট।
ফরহাদ হোসেন চকদার আরও বলেন, দেশের জ্বালানি তেলের (ডিজেল) দাম প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জ্বালানি তেলের উপরে আমাদের সবকিছু নির্ভর করতে হয়। এই তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে মোকাম থেকে ২০০ মণ ধান নিয়ে আসতে যেখানে তিন হাজার খরচ হতো সেই পরিমাণ ধান আনতে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ঢাকায় যে চাল পাঠাতে ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হতো সেই চাল পাঠাতে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকায় পাঠাতে হচ্ছে। ফলে চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসআইএইচ