সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ও অন্যান্য অপরাধে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে অপারেশন ডেভিল হান্টে ৬০৭ জন এবং অন্যান্য মামলায় ১১৬৮ জন গ্রেফতার হয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দফতর থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে এখন পর্যন্ত দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি এলজি, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি পাইপগান, ২ রাউন্ড গুলি, ৫টি কার্তুজ, ২টি চাপাতি, ৬টি দারামদা, ১৩টি চাকুছোরা, ২টি কুড়াল, একটি করাত, ৩টি হাতুড়ি, ২টি প্লাস, ২টি বাটাল এবং ২টি লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে।
গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৫২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
ইংরেজি শব্দ ‘ডেভিল’ অর্থ শয়তান এবং ‘হান্ট’ অর্থ শিকার। অর্থাৎ, ‘ডেভিল হান্ট’ মানে শয়তান শিকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এই অভিযানের লক্ষ্য দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের দমন করা।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। এ ঘটনার পরই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হয়।
পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ৪ নেতা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তারা মুক্তি পান।
মুক্তিপ্রাপ্ত নেতারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোখলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কেএম আখতারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন এবং বিএনপির স্থানীয় নেতা শামসুল আলম।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৯ জনসহ ৪৭ আসামির সবাইকে হাইকোর্ট খালাস দেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ জন কনডেম সেলে বন্দি ছিলেন। হাইকোর্টের রায় কারাগারে পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
এদিকে, মুক্তির খবর পেয়ে সকাল থেকেই ঈশ্বরদী থেকে গাড়িবহর নিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। মুক্তির পর নেতাদের ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করা হয় এবং স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগ ওঠে। মামলার দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার পর ২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন। পরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে ৪৭ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
দেশজুড়ে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানে চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৯ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) কনক কুমার দাস। এর আগে সোমবার দিবাগত সারারাত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে সাঈদ আহম্মেদ উৎস (২৫), তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে শামসুজ্জামান (৪০), তিনি বাড়াদী ইউপি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আলমডাঙ্গা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত বিশারত আলীর ছেলে জামিরুল ইসলাম (৩৫), তিনি জামজামি ইউপি যুবলীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি। আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া গ্রামের ইখতার আলী মণ্ডল ছেলে রেজাউল করিম (৩৭), তিনি ভাংবাড়িয়া ইউপি যুবলীগের সভাপতি।
দর্শনা থানার কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত জাফর আলীর ছেলে সালাউদ্দিন (৩৩), তিনি নেহালপুর ইউপি যুবলীগের সহ-সম্পাদক। কুন্দিপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে জামাল উদ্দিন (৫৫), তিনি নেহালপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক। ডিহি কৃষ্ণপুর গ্রামের রমজান মণ্ডলের ছেলে মফিজুল ইসলাম (৪৬), তিনি নেহালপুর ইউপি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক।
দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে হাসান আলী (৪৪), তিনি দামুড়হুদা ইউপির ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি।
জীবননগর উপজেলার নিধিকুন্ড গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে রাশেদ মিয়া (৫০), তিনি আন্দুলবাড়ীয়া গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) কনক কুমার দাস জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে জেলার পাঁচটি থানায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসকদের সময়মতো না আসা, রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক-নার্সদের দুর্ব্যবহার, দালালের দৌরাত্ম, ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি, চিকিৎসা সেবায় অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তালা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। হাসপাতালের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তালাবদ্ধ রাখার ঘোষণা দেন তাঁরা।
মঙ্গলবার(১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ২৫০ শয্যবিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। পরে তাঁরা হাসপাতালের তত্ত্ববধায়কের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় তত্ত্ববধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী তাঁর কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের চেম্বার, মেডিসিন স্টোরসহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
হাসপাতাল পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জেরা করেন এবং সংশোধন হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নওগাঁর ছাত্র প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী, মেহেদী হাসান, রাফী বিন রেজওয়ান, সাদমান সাকিব, রিয়াল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নওগাঁর ছাত্র প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী বলেন, নওগাঁ সদর হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকেরা সময়মতো ডিউটিতে আসেন না। আবার ডিউটি সময়ে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন না করে অনেক চিকিৎসক বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বারে কিংবা ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন। হাসপাতালে রোগীদের জন্য খাবার দেওয়া হয় সেটাও অত্যন্ত নিন্ম মানের। এছাড়া হাসপাতাল থেকে ওষুধ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের রয়েছে। এখানে দালালের দৌরাত্ম ব্যাপক। দালালদের কারণে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় এসব অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য ৫ আগস্টের পর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ প্রশাসনিক বিভাগের কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগ নেননি। দ্বায়িত্বে অবহেলার জন্য আজকে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তালা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসার পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত তাঁকে তাঁর কক্ষে বসতে দেওয়া হবে না।
হাসপাতালের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সে বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আবু জার গাফফার শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব দাবি করেছে তাঁর সবই যৌক্তিক। ইতোমধ্যে তাঁদের অনেক দাবি পূরণ করা হয়েছে। বাকি যে সব অনিয়ম-অসঙ্গগতির কথা বলা হচ্ছে, আরএমও হিসেবে আমার জায়গা থেকে সেসব দাবি পূরণের চেষ্টা করব। তবে আমি এই হাসপাতালের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ নই। আমার ওপরেও কর্তৃপক্ষ আছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে দাবিগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তা রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।