আন্দোলনে আবুলের লাশ পুড়িয়ে দেয় পুলিশ, বিপাকে পরিবার
আন্দোলনে আবুলের লাশ পুড়িয়ে দেয় পুলিশ, বিপাকে পরিবার। ছবি: সংগৃহীত
৫ আগস্টের সরকার পতনের আন্দোলনে প্রাণ হারান সাভারের দিনমজুর আবুল হোসেন (৩৪)। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ফুলঘর গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে। জীবিকার তাগিদে স্ত্রী লাকী আক্তার ও দুই সন্তান নিয়ে সাভারের আশুলিয়ায় বসবাস করতেন এবং রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর, শুধু প্রাণ হারিয়েই ক্ষান্ত হয়নি আবুলের পরিবার, তার লাশের সঙ্গেও ঘটে নির্মম বর্বরতা। পুলিশের ভ্যানে তোলা তার এবং আরও ছয়টি লাশ থানার সামনে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
আবুল হোসেনের পরিবার জানায়, ৫ আগস্ট আন্দোলনের দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবুল। তার নিখোঁজ হওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো সন্ধান না পেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে প্রথমে পুলিশ তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯ আগস্ট সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের চাপের মুখে আশুলিয়া থানা পুলিশ বাধ্য হয়ে জিডি নেয়। এরপর ২৯ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হলে আবুলের পরিবারের কাছে তার মৃত্যুর নির্মম সত্য উন্মোচিত হয়। ভিডিওতে পুলিশের ভ্যানে লাশের স্তূপ দেখা যায়, যার মধ্যে ব্রাজিলের জার্সি ও লুঙ্গি পরিহিত একজনকেও দেখা যায়। ওই পোশাক দেখে আবুল হোসেনকে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
তবে, শনাক্ত করার পরও পরিবারের হাতে আর তার লাশটি তুলে দেওয়া হয়নি। পুলিশের অমানবিক আচরণের শিকার হয়ে লাশটি আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই খবর পরিবারের ওপর নেমে আসে বজ্রাঘাতের মতো।
আবুল হোসেনের মৃত্যুতে তার পরিবার এক চরম বিপদের মুখে পড়েছে। তার স্ত্রী লাকী আক্তার এখন দুই অবুঝ সন্তান নিয়ে দিশেহারা। বড় ছেলে ১০ বছর বয়সী হলেও ছোটটি মাত্র ৭ মাসের। বাবা হারানোর শোক বুঝে ওঠার আগেই এতিম হয়ে যায় ছোটটি। লাকী আক্তার জানান, তার দুই সন্তানের ভরণপোষণের জন্য এখন তার কোনো সহায় নেই। গ্রামে ফিরে এলেও থাকার মতো কোনো ঘর নেই। তিনি আবুলের শহীদ মর্যাদা দাবি করেন এবং সমাজের কাছে সহযোগিতা প্রার্থনা করেন, যেন তার সন্তানরা শহীদের সন্তান হিসেবে সম্মানিত হতে পারে এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হয়।
আবুলের মা সালমা আক্তার বলেন, "আমি ১০ মাস গর্ভে ধারণ করে তাকে জন্ম দিয়েছি। সে আমার প্রথম সন্তান। তার লাশটাও বুকে জড়িয়ে ধরা আমার নসিব হলো না। পুড়িয়ে দিল আমার কলিজার লাশটাকে। এই কষ্ট কারে দেখামু বাবা, এই কষ্ট আমি কারে দেখামু।"
তার বাবা মনির মিয়া বলেন, "আমার ছেলের মতো আরও অনেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করেছে এই জালিমরা। আমি আমার সব সন্তান হত্যার বিচার চাই।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন জানিয়েছেন, আবুল হোসেনের পরিবারের জন্য উপজেলা প্রশাসন দ্রুত সহযোগিতা করবে এবং তাদের পাশে থাকবে। এছাড়াও, আবুলের পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ঘর ও আয়ের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এই অমানবিক হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের হৃদয় ভেঙে দেয়নি, বরং এটি একটি সমাজের ব্যর্থতা ও নিষ্ঠুরতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। আবুল হোসেনের মতো নিরীহ মানুষদের জীবন এত সহজে শেষ হয়ে যেতে পারে না।