ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় ৩ রোহিঙ্গা নারীসহ ১৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
শুক্রবার রাতে উপজেলার সামন্তা, বাঘাডাঙ্গা ও খোশালপুর সীমান্ত এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল শাহ মোঃ আজিজুস শহীদ জানান, মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে কিছু ব্যক্তি ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়। সেসময় ওই ৩টি সীমান্ত এলাকা থেকে ৩জন রোহিঙ্গা নারী ও দালালের সহযোগী মাইক্রোবাস চালকসহ মোট ১৭ জনকে আটক কওে বিজিবি সদস্যরা। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করে আটককৃতদের মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। ছবি: সংগৃহীত
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
তিনি বলেন, রাঙামাটিতে আসার সময় দেয়ালে দেয়ালে যে গ্রাফিতি দেখেছি, সেই গ্রাফিতির যে বার্তা তা পার্বত্য চট্টগ্রামেও দেখতে চাই। সেখানে সম্প্রীতি থাকবে; কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমরা সকলে সম্প্রীতি চাই। কিন্তু কোথাও একটা ছন্দপতন হচ্ছে। ছন্দপতনের ব্যাপারে প্রত্যেকের মুখে একটা শব্দই উচ্চারিত হয়েছে- ‘ষড়যন্ত্র’। বাইরে থেকে একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাঙামাটি সেনানিবাসে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভার পর হাসান আরিফ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। পাহাড়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হাসান আরিফ বলেন, সভায় দাবি এসেছে একটি কমিশন বা কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে সেখানে সুষ্ঠু ব্যবস্থা করার। যারা প্রকৃত দোষী তাদের যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এখানে কোনো ভেদাভেদ না থাক, সম্পীতির অভাব না থাক, প্রত্যেকেই আমরা সম্প্রীতি চাই।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মইনুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাইনুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্থানীয়দের মধ্যে বিএনপি, জনসংহতি সমিতি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নিজেদের বক্তব্য ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বে যেসব কর্মকর্তারা ছিলেন তারা এখনও সেই দায়িত্বে রয়ে গেছেন।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
৫ আগস্টের পরিবর্তন কোনো ছোটখাট বিষয় না বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব। তার মতে, এরমাধমে একটা জাতি ও গোটা দেশকে বদলে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের মতো দেশে এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে তখন তদবির অসংখ্যগুণ বেড়ে যায় বলে দাবি করেন মির্জা ফখরল। তিনি বলেন, তখন সবাই নতুন সরকারের কাছাকাছি যেতে চায়। ফলে, আমরা যদি আশা করি, এই সরকার এতো দ্রুত সবকিছু ম্যানেজ করবে- এটা আশা করা ঠিক হবে না।
ফখরুল বলেন, এখনও তাদের সরিয়ে পরিবর্তনের পক্ষের কিংবা নিরপেক্ষ লোক বসানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ কম হচ্ছে, সেই কারণে এখানে একটা শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। এই কারণে বিপ্লবের পর থেকে যে ঘটনাগুলো শুরু হয়েছে, তা কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
“প্রথমে আনসারদের ঘটনা ঘটানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। সরকারকে বিপদগ্রস্ত করার জন্য। এরপর বিভিন্ন ধরনের লোকজন তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্ঠা করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সর্বশেষ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের ঘটনা (ছাত্রদের হত্যা), সেটাকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি না” -বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
“রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে যে সংকট আছে, তা উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর বেশি-বেশি আলোচনা করা দরকার। সেটা হয়তো কোনো কারণে সম্ভব হচ্ছে না। অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা কিছুটা কম হচ্ছে”- বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
এ সংকট শতভাগ রাজনৈতিক বলে মনে করনে মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পরিবর্তনটা রাজনৈতিক। এর দীর্ঘ আন্দোলনটা ছিল রাজনৈতিক। এখন সেই সেখানে রাজনৈতিক একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ৮ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে আবাসিক হলে তাদের সিটও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ে ফজলুল হক মুসলিম হলে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক মুসলিম হলের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে অভিযুক্ত ৮ জন ছাত্রের আবাসিক সিট হল প্রশাসন বাতিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে। এছাড়া, ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহ্ মো. মাসুমকে পরিবর্তন করে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস আল-মামুনকে হলটির নতুন প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
সাময়িক বহিষ্কৃত ও সিট বাতিল হওয়া আট শিক্ষার্থী হলেন- পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবির ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল আলম। তাদের মধ্যে ফিরোজ কবির ও আবদুস সামাদ বাদে বাকীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণকে দফায় দফায় মারধরের ঘটনায় ঘটেছে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যুবকের নাম তোফাজ্জল। বরগুনার পাথরঘাটার কাঁঠালতলি ইউনিয়নে তার বাড়ি। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্মমভাবে তোফাজ্জলকে পিটানো হয়েছে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন জানার পরেও তাকে ছাড়েননি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের নানাভাবে বোঝানোর চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। ওইদিন দুপুরে আবাসিক হলের খেলার মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় ছয় শিক্ষার্থীর মোবাইল ও চার শিক্ষার্থীর মানিব্যাগ চুরি হয়। রাত আটটার দিকে তোফাজ্জল নামের ওই ব্যক্তি হলে প্রবেশ করলে মোবাইল চোর সন্দেহে তাকে আটক করেন একদল শিক্ষার্থী। পরে তাকে হলের অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ ও পরে হালকা মারধর করে তারা। পরবর্তীতে তাকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে ফের অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে দফায় দফায় মারধর করা হয়।
পরে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তোফাজ্জলকে যখন অভ্যর্থনা কক্ষে আনা হয়, তখন সেখানে প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তাকে তারাই বেশি মারধর করেছে। প্রথমে হাত বেধে তাকে মারধর করা হয়। পরে চোখ বন্ধ করে মারধর করা হয়। এসসয় তোফাজ্জল মাটিয়ে লুঠিয়ে পড়লে তাকে পানি খাওয়ানো হয়। পরে তোফাজ্জল উঠে বসলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খুশিতে হাততালি দেয় এই ভেবে যে তাকে ফের মারধর করা যাবে। পরে তাকে মারধর করার সময় দিয়েশলাই দিয়ে পায়ে আগুনও ধরিয়ে দেয় একজন। পরে আরেকজন তোফাজ্জলের ভ্রু ও চুল কেটে দেয়। পরে তোফাজ্জলকে হলের মেইন বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে বুট জুতা পরে তোফাজ্জলের আঙ্গুল মাড়িয়ে ছেঁচে ফেলা হয় এবং গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করা হয়।