ফেনীতে অবাধে কেটে নেওয়া হচ্ছে উর্বর মাটি
ফেনীতে অবাধে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। এসব মাটি যাচ্ছে ইটভাটাসহ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজে। মাটিবাহী ট্রাক্টরের চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাদি জমি, গ্রামীণ সড়ক। মাটির উপরিভাগের উর্বর অংশ কেটে সরিয়ে নেওয়ার ফলে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু সুফল মেলেনি। আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় কমছে উর্বরতা। এতে কমছে চাষাবাদ। পাশাপাশি বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পাশের দেশ ভারত থেকে মাটিও আমদানি করতে হতে পারে।’
ফুলগাজী উপজেলার বাসিন্দা সালা উদ্দিন বলেন, ‘একাধিক সিন্ডিকেট মাটির ব্যবসায় সক্রিয়। এতে জড়িত ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাত করে অবাধে কেটে চলেছেন কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি। ফলে কমে যাচ্ছে চাষাবাদ।’
একই উপজেলার মাহবুব আলম বলেন, ‘বেশিরভাগ মাটি কিনছেন ইটভাটার মালিক কিংবা বিত্তবান ব্যক্তিরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় মাটিও আমদানি নির্ভর হতে হবে আমাদের।’
পরশুরাম উপজেলার মকবুল হোসেন বলেন, ‘টাকার লোভে অনেকে মাটি বিক্রিতে ঝুঁকছেন। ১০-১২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করে মাটি বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাশের জমির মাটিও ভেঙে পড়ছে। বাধ্য হয়ে সেসব জমির মাটিও বিক্রি করছেন মালিকেরা।’
রবিউল ইসলাম নামের সোনাগাজী এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘রাতের আঁধারে সব মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কিছু বললে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মাটিখেকোরা জমিকে পুকুর-খালে পরিণত করছে। এসব দেখেও প্রশাসন নীরব।’
তবে প্রশাসন সূত্রের দাবি, তারা অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে ‘জিরো টলারেন্সে’ নীতি নিয়েছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ফুলগাজী উপজেলা বাজারের উত্তরপাশে মুহুরি নদীর তীর থেকে কৃষি জমির মাটি কাটার অভিযোগে চার পিকআপ ট্রাক চালককে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ৬টি পিকআপ ও ১টি এক্সক্যাভেটর জব্দ করা হয়েছে। পরে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে থানায় হস্তান্তর করা হয়।
সোনাগাজী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বণিক বলেন, ‘বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নে অভিযান চালাই আমরা। এ সময় ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার দায়ে আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার একই অপরাধে ওই এলাকার জিয়াউর রহমানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় অভিযুক্তরা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধে নিজেকে জড়াবেন না মর্মে মুচলেকা দেন।’
জানতে চাইলে ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, ‘জেলায় নিবন্ধনভুক্ত ইটভাটার সংখ্যা ১০২টি। এসব ভাটায় বছরে অন্তত দেড় কোটি টন মাটির চাহিদা রয়েছে। তবে কৃষিজমির মাটি রক্ষায় প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। এতে প্রায়ই অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা করা হয়।’
/এএন