সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম
ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র নগরী মক্কায় যাওয়ার পথে সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ১৮ বাংলাদেশির মধ্যে কুমিল্লার তিনজন এবং কক্সবাজারের দুইজন রয়েছেন। কুমিল্লার তিনজন হলেন জেলার মুরাদনগর উপজেলার গোমস্তাপুর গ্রামের মামুন, রাসেল মোল্লা ও দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার এলাকার গিয়াস উদ্দিন। আর কক্সবাজারের দুইজন হলেন জেলার মহেশখালী উপজেলার মোহাম্মদ শেফায়েত উল্লাহ (২২) ও মোহাম্মদ আসিফ (২৪)। সম্পর্কে তাঁরা খালাতো ভাই। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
কুমিল্লা
মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার পর জেলার মুরাদনগর উপজেলার গোমস্তাপুর গ্রামে মামুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সৌদি আরবে ২২ বছর বয়সী এই যুবকের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে বুধবার সকাল থেকে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করতে থাকেন তার বাড়িতে।
বাড়িতে দেখা যায়, মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল তেমন কথা বলছেন না। মা মমতাজ বেগম ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। মোবাইলে ছবি দেখে বুক চাপড়াতে দেখা যায় তাকে।
আবদুল আওয়ালের তিন মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চতুর্থ। ছয় মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদি আরবে যান। সেখানে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন।
নিহত মামুনের মামী তাসলিমা বেগম জানান, মামুন, তার মামা ইয়ার হোসেন এবং মামুনের ভাগ্নে জাহিদুল ইসলাম বাসে করে ওমরাহ করার জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা হন। পথে তারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।
তাসলিমা আরও জানান, মামুন ও স্বজনদের বহন করা বাসটি ব্রেকফেল করে একটি ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে আগুন ধরে যায়। মামুন গাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হয়।
এ দুর্ঘটনায় মামুনের মামা ইয়ার হোসেন ও ভাগ্নে জাহিদ গুরুতর আহত হন। তারা মক্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল জানান, অন্তত ৯ মাস আগে মামুন ভিসার জন্য আবেদন করেন। বয়স কম হওয়ায় সেই আবেদন বাদ দেওয়া হয়। পরে ৬ মাস আগে ফের আবেদন করেন মামুন। ৫ লাখ টাকা খরচ করে তাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। পুরো টাকা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার করা।
তিনি বলেন, ‘সৌদিতে সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা খবর পাই রাত ১টার দিকে। আমার নাতি জাহিদ ফোন করে বলে নানা, মামুন মামা তো নাই। সে ওমরাহ করার আগে আমাদের জন্য দোয়া করবে বলে যায়।’
এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি বলেন, ‘আমি নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনিকভাবে পরিবারটির জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করব।’
কুমিল্লা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দপ্তরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনেছি। মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা যা করতে হয়, তার সবই করব।’
কক্সবাজার
সোমবার ইয়েমেন সীমান্তবর্তী সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় ওই র্মমান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার দুইজন। নিহতদের অকাল মৃত্যুতে মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁদের পরিবারের আহাজারি শুরু হয়। প্রতিবেশীসহ আশপাশের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করেন।
নিহত শেফায়েত উল্লাহ ও মোহাম্মদ আসিফের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে সৌদি আরবে যান শেফায়েত উল্লাহ। এর আগে তার দুই বড় ভাই সাইফুল ইসলাম ও শাহাজাহান ইসলাম সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তারা তিন ভাই সৌদি আরবের আবাহা কামিছে আবাসিক হোটেলে চাকরি করেন। খালাতো ভাইয়ের সূত্র ধরে দুই বছর আগে সৌদি আরবে যান মোহাম্মদ আসিফ।
শেফায়েত উল্লাহর বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে সেহরি খাওয়ার সময় সৌদি আরব থেকে ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম ফোন করেন। তিনি শেফায়েতের মৃত্যুর সংবাদ জানান। একই সঙ্গে তাঁর খালাতো ভাই আসিফও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে জানান।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শরীফ বাদশা বলেন, সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনায় মহেশখালীর দুই ওমরাহ হজ্জ যাত্রী নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি আসলে খুবই মর্মান্তিক।