সরকারি হাসপাতাল 'দালালদের নিরাপদ ব্যবসাস্থল'
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে নিতে সকাল-সন্ধ্যা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দালালরা। উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিতে দালাল নিয়োগ করেছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালমুক্ত হাসপাতাল গড়তে হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে হাসপাতালে রোগী সেজে চুরির ঘটনা ঘটছে। সংঘবদ্ধ নারী দলের সদস্যরা হাসপাতালে আসা রোগীদের গলার চেইন, ভ্যানিটি ব্যাগ, মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। চুরির ঘটনায় বুধবার (১২ জানুয়ারি) হাসপাতালে জামালপুর জেলার তিন নারী চোরকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- জামালপুর জেলার নান্দিনার বাদীর চামড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে নার্গিস (১৮), ইসলামপুর উপজেলার হারগিলা গ্রামের চেন্টুর স্ত্রী জেলেহা খাতুন (৩৬) ও জেলেহার মেয়ে জেসমিন (১৩)।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আউটডোরে টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়েছেন হাসপাতালে আসা নাসরিন নামে এক রোগী। এতে চিকিৎসক ওই রোগীকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পরামর্শ দেন। রোগীটি বাইরে বেরোতেই দালালের খপ্পরে পড়েন।
পরে একে একে কয়েকজন দালাল ওই রোগীকে তাদের ক্লিনিকে নিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগী কোনো পরীক্ষা করাবে না জানালে দালালরা ভিন্ন রোগীর খোঁজে স্থান ত্যাগ করে। এমন চিত্র পুরো হাসপাতালজুড়ে দেখা গেছে।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারি, অস্ত্রপাচার, এক্সরে, ইসিজিসহ ক্লিনিক্যাল সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হাসপাতালে আসা রোগীদের ক্লিনিকে নিতে দালালরা মিথ্যা ও প্রলোভন দেখায়।
তাদের মতে, সরকারি হাসপাতাল মানেই ব্যবসার অন্যতম একমাত্র আশ্রয়স্থল। কেননা, যতজন রোগী ক্লিনিকে নিয়ে দিতে পারবে ততটাই কমিশন পান দালালরা। এতে রোগীরা দালালদের খপ্পরে পড়ে ক্লিনিকে চলে যান। ফলে প্রতারণা ও বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে আসা রোগী ইশরাত জাহান জানান, চিকিৎসক দেখিয়ে চেম্বারের বাইরে আসতেই এক নারী এগিয়ে আসে। এ সময় তিনি বলেন, হাসপাতালে তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। তাই আসুন বাইরে থেকে কম টাকায় পরীক্ষা করিয়ে দিই।
রোগীরা জানান, দালালরা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকার কথা বলে ক্লিনিকে যেতে বলে। এতে বাড়তি টাকার পাশাপাশি নামসর্বস্ব পরীক্ষায় প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিকের এক নারী দালাল জানান, হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকায় রোগী তেমন পাওয়া যায় না। একজন রোগী নিতে পারলে কিছু কমিশন পাওয়া যায়। এতে দুপুর পর্যন্ত কয়েকজন রোগী ক্লিনিকে নিতে পারলে তিন-চারশ টাকা পাওয়া যায়।
ভূঞাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম জানান, মোবাইল চুরির ঘটনায় ওই তিন নারীকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহিউদ্দীন জানান, রোগী সেজে দালালরা হাসপাতালে আসে রোগী ভাগিয়ে নিতে। হাসপাতাল দালালমুক্ত করতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। হাসপাতালেই কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
এরপরও দালালরা রোগী ক্লিনিকে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। এ ছাড়াও হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত কারণে এবং করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণের ফলে রোগীর সংখ্যা বেশি হয়। এতে সংঘবদ্ধ চোর চক্র মানুষের জিনিসপত্র চুরি করছে।
এফএস/টিটি