শীতের দাপটে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের দাপট বাড়ছে, আসছে শৈত্যপ্রবাহ। ইতোমধ্যে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে তাপমাত্রা। সোমবার (০৩ ডিসেম্বর) থেকে আরও বাড়বে শীতের দাপট। চলতি মাসে এক থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। এমনটি জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
হাড় কাঁপানো হিমেল বাতাস বইছে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। তীব্র ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত। দিনে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমছে না। কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। এছাড়াও বেকায়দায় পরাছে গরিব, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। কষ্টে রয়েছে গবাদিপশুও।
বগুড়ার প্রধান হাসপাতাল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তির পরিমাণ বেড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬৭ জন, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০৯ শিশু ভর্তি হয়েছেন। যা গত সপ্তাহের দ্বিগুণ।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কাজল ঢাকাপ্রকাশকে জানান, নিউমোনিয়া, জ্বর, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগের মাত্রা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। শিশুরা নিউমোনিয়া এবং বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টজনিত এবং ডায়ারিয়ায় রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে জানুয়ারি মাসে দেশে এক থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। এর মধ্যে একটি বেশ তীব্র হবে। তা হলে আরও বিপর্যস্ত হয়ে উঠতে পারে জনজীবন। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
বছরের প্রথম শৈত্যপ্রবাহটি প্রায় সপ্তাহখানেক থাকতে পারে। শৈত্যপ্রবাহটি দেশের উত্তরাঞ্চলে শুরু হবে। এরপর ধীরে ধীরে দক্ষিণ অঞ্চলের দিকে বয়ে যাবে। তবে শীতের দাপট উত্তরেই বেশি দেখা দিবে বলে মনে করছে আবহাওয়া অফিস।
এই মুহূর্তে উত্তরাঞ্চলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। উত্তরের জেলাগুলোতে তীব্র কুয়াশায় পথ চলতে বিপাকে পড়ছেন পরিবহন চালকরা। দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে বেশি।
দুদিন ধরে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। শীত ও কুয়াশার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। তারা কাজের জন্য ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। হতদরিদ্র মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতবস্ত্র না থাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে বস্তি, ছিন্নমূল মানুষসহ জেলার প্রতিবন্ধীরা। শীতে ছিন্নমূল মানুষেরা বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে। হাটবাজারে শীতের কাপড়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অসহায় মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে এলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশকে
বলেন, জেলা সদরে এখনও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি। তবে বিভিন্ন উপজেলেয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সদরেও তাপমাত্রা ক্রমে কমছে। এতে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। জেলার হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা।
/এএন