রাজশাহীর হোটেল-রেস্তোরাঁয় যায় মৃত ছাগলের মাংস
রাজশাহীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা হয় মৃত ছাগলের মাংস। রুগ্ন ছাগল কেনার পর মারা গেলেও সেগুলোকে জবাই করে মাংস করা হয়। শুধু হোটেল-রেস্তোরাঁয় নয়, ঠিকাদারের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতাল এবং কারাগারেও কম দামে এসব মাংস সরবরাহ করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এমন একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযানে চারজন কসাই ও মাংস দোকানীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে থেকে ১৫০ কেজি মৃত ছাগলের মাংস ও মৃত জবাইকৃত চারটি ছাগল এবং অসুস্থ-রুগ্ন ২৭টি জীবিত ছাগল জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার রাতে রাজশাহীর বালিয়ার মোড়ে অভিযান চালিয়ে একটি পিকআপ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চারজন হলেন- রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া এলাকার মশিউর রহমান আপেল, মো. ফায়সাল, মো. কায়েস ও ফয়সাল হোসেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরায় ৪০০ টাকা কেজি দরে এসব মাংস সরবরাহ করা হতো। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারদেরও সরবরাহ করা হতো এসব মাংস। দীর্ঘদিন ধরেই এ কাজ করে আসছিলেন বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছেন।
নগর ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল জানান, চক্রটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে রুগ্ন ছাগল কিনতেন। রাজশাহী আনার পথে কিছু ছাগল মারা যায়। তখনও এগুলো ফেলে না দিয়ে গলা কাটা হতো। তারপর মাংস করে সরবরাহ করা হতো। হোটেল-রেস্তোঁরার পাশাপাশি হাসপাতাল ও জেলখানার ঠিকাদারকে এগুলো দেওয়া হতো।
তিনি জানান, অভিযানে মাংস, জবাই করা ছাগল ও জীবিত ছাগল সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলামকে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়। তিনি জানান, ছাগলগুলো মারা যাওয়ার পর জবাই করা। মাংসগুলোও মৃত ছাগলের। তাই সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল-মারুফ অভিযুক্ত মশিউর রহমান আপেল ও মো. ফায়সালকে ৮০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
এসব মাংস কারাগারে ঢোকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, ‘আমাদের এখানে মাসে একটি ছাগি নেওয়া হয়। সেটি আমাদের সামনে এনেই জবাই করা হয়। এখানে এ ধরনের মাংস আসার সুযোগ নেই।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘রোগীদের ডায়েটে শুধু মাছ এবং মুরগির মাংস থাকে। গরু বা খাসির মাংস থাকে না। তবে বিশেষ দিনগুলোতে রোগীদের উন্নত খাবার পরিবেশন করতে হয়। সেদিন ঠিকাদারকে আমাদের হাসপাতালে খাসি নিয়ে আসতে বলা হয়। আমাদের সামনে সে খাসি জবাই করে আমরা মাংস নিয়ে থাকি। এখানে মৃত ছাগলের মাংস আনার সুযোগ নেই।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল-মারুফ জানান, হোটেল-রেস্তোরায় এ ধরনের মাংস সরবরাহ করার যে তথ্য পাওয়া গেছে সেটি তারা এখন আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখবেন।
রাজশাহী সিটি করপোরশনের ভ্যাটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দীন বলেন, ‘বাজারে যখন পশু জবাই করা হয় তখন সেখানে আমাদের লোক থাকে। রুগ্ন পশু জবাই কিংবা বিক্রি করার সুযোগ নেই।’
এসএসকে/এএন