চট্টগ্রামে হাফ ভাড়ার লাঞ্ছনায় শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রামে হাফ ভাড়া চালু হলো মাত্র কদিন আগে। এরমধ্যে শুরু হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা। চালক-হেলপার আগে শিক্ষার্থী দেখলে যেখানে টেনে গাড়িতে তুলত সেখানে স্কুল পরিহিত শিক্ষার্থী দেখলে এখন ভোঁ দৌড়, সঙ্গে থাকে গালি-গালাজ। কোনো শিক্ষার্থী কোনোক্রমে বাসে উঠে পড়লে হাফ ভাড়া নিয়ে শুরু হয় নানা গঞ্জনা।
চট্টগ্রাম মহানগরীর কয়েকটি রুটে এমন লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার গল্প শুনাল কয়েকজন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল হোসেন। রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে ১০নং রুটের বাসে উঠে সে। স্কুলের সামনে পর্যন্ত মাত্র দুই কিলোমিটারের মাথায় তাকে ভাড়া দিতে হয় ১০ টাকা।
রবিউলের ভাষ্য, গত ১১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া চালুর নির্দেশনা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। বরং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে হেলপাররা। রবিউলের মতো বাসের অন্য যাত্রীদের দাবি, ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ালেও আগের সম্পূর্ণ ভাড়ার উপর নাসিরাবাদ-জিইসির মোড় পর্যন্ত ভাড়া দাঁড়ায় ৬ টাকার মতো। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা।
রবিউল বলেন, ‘ছাত্র হিসেবে আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখিয়ে হাফ ভাড়া দিতে চাইলে হেলপার তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। চালকও দুর্ব্যবহার করেন। এরপর লজ্জায় হাফ ভাড়া নয়, বাড়তি ভাড়ার চেয়েও দাবি করা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নেমে যাই।’
নগরীর লালখানবাজার মোড়ে কলেজে যেতে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানে কলেজে যাওয়ার সময় বাসের হেলপারকে আইডি কার্ড দেখানোর পরও তিনি হাফ ভাড়া নেননি। এ নিয়ে হেলপারের সঙ্গে আমার বেশ কিছু সময় কথা কাটাকাটি হয়। এরপর থেকে লজ্জায় হেলপারের দাবি করা ভাড়া দিয়ে আসছি।’
কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাসে আইডি কার্ড দেখিয়ে হাফ ভাড়া দিতে চাইলে বাসের হেলপার গালাগাল শুরু করেন। পরে লজ্জায় পুরো ভাড়া দিই। আমার সঙ্গে থাকা বন্ধুরাও ভয়ে পুরো ভাড়া দিয়ে দেয়।’
শিক্ষার্থীদের দাবি, এক জায়গায় কয়েকজন স্কুলছাত্র দেখলে দ্রুতগতিতে বাস চালিয়ে চলে যাচ্ছেন চালকরা। আবার বাসে উঠে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখালেও হাফ ভাড়া নিতে চাচ্ছেন না হেলপাররা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে।
হাফভাড়া না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বহদ্দারহাটগামী ১০নং রুটের একটি বাসের চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘হাফ ভাড়ার বিষয়ে মালিকপক্ষ আমাদের কিছুই বলেননি। তাহলে আমরা কেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিব?’ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ১১ তারিখ থেকে শিক্ষার্থীদের বাসে হাফ ভাড়া নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। এরপর হাফ ভাড়া না নেওয়া সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) চট্টগ্রাম বাস ডিপো ম্যানেজার আবদুল লতিফ বলেন, ‘সারাদেশে বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর আছে। বিআরটিসির কোনো বাসে হাফ ভাড়া না নেওয়ার অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’
আইকে/এএন