কুষ্টিয়ায় সরকারি অর্থ লোপাটের ঘটনায় দুদকের মামলা
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র ও রুটিন মেরামত কাজের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) কুষ্টিয়া আদালতে দুদকের পক্ষে মামলাগুলো দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক (সংযুক্ত) মো. আলমগীর হোসেন। মামলায় খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আখতারসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তিনজন সভাপতি, এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) এবং একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়।
দুদকের মামলার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে খোকসা উপজেলার ৮৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত ও উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ আসে। বরাদ্দকৃত সেই অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ের কোনো কাজ না করেই বেশির ভাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, শিক্ষক সমিতির নেতা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ তুলে আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে নেমে কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পায় দুদক। এর প্রেক্ষিতে ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) খোকসা উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করে তদন্ত দলের সদস্যরা।
পরে এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয় কু্ষ্টিয়ার উপপরিচালক (সংযুক্ত) মো. আলমগীর।
মামলা তিনটিতে পৃথক পৃথক আসামি করা হয়। এর মধ্যে প্রথম মামলায় খোকসা উপজেলার ৮০ নম্বর মাছুয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকর্ণ কুমার বিশ্বাস, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বাবুল আখতার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হোসাইন মোহম্মদ বেলালের বিরুদ্ধে বারদ্দকৃত ২ লাখ টাকার মধ্যে ৫০ হাজার ৮২৫ টাকার কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৬ নম্বর মামলা করা হয়।
দ্বিতীয় মামলায় ৭২ নম্বর মামুদানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার বিশ্বাস, সভাপতি মাহিমা রঞ্জন মৈত্র, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হোসাইন মোহম্মদ বেলালের বিরুদ্ধে বারদ্দকৃত ২ লাখ টাকার মধ্যে ৫৭ হাজার ২২৮ টাকা কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৭ নম্বর মামলা করা হয়।
তৃতীয় মামলায় ৩০ নম্বর ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর হক, সভাপতি আনোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হোসাইন মোহম্মদ বেলালের বিরুদ্ধে বারদ্দকৃত ২ লাখ টাকার মধ্যে ৭০ হাজার ১৭৩ টাকা কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৮ নম্বর মামলা করা হয়।
সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভাগীয় কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে মামলার পাশাপাশি তদন্তকারি কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, দুর্নীতির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু হানিফ দুদক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার কথা বলে ৮৭টি বিদ্যালয়ের প্রতিটি থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ২ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা তোলেন। তবে দুদক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে না পারলেও আবু হানিফ চাঁদা তোলা সেই ২ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা ওই ৮৭টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আর ফেরত দেননি।
এ ব্যাপারে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাছুয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অভিযুক্ত বাবুল আখতার জানান, দুদুক তার কাছে কোনো বিষয়ে জানার চেষ্টা করেনি। মামলা হয়েছে
আইনগতভাবে মামলা মোকাবিলা করা হবে।
এ ব্যাপারে ওই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক জাকারিয়া রহমান বলেন, কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতে মামলা তিনটির বিচারিক কাজ চলবে। আসামিদের বিরুদ্ধে সমন অথবা গ্রেপ্তারের বিষয় আদালতের এখতিয়ার।
এসআইএইচ