ছত্রাক রোগে ভুট্টা ক্ষেতে পচন, মাথায় হাত চাষীদের
কুড়িগ্রামে হঠাৎ করে ছত্রাক জাতীয় ব্লাস্ট রোগে ভুট্টা ক্ষেত আক্রান্ত হওয়ায় চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। ধার-দেনা করে কিংবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যারা স্বপ্ন বুনছিলেন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তারাই এখন হতাশ কিভাবে শোধ করবেন ধার-দেনা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাকির হোসেন জানান, চলতি বছর সদর উপজেলায় ভুট্টা চাষ করা হয়েছে ৭২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১০ হেক্টর ভুট্টা বিনষ্ট হয়ে গেছে ব্লাষ্ট রোগে। ধারণা করা হচ্ছে, যেসব কৃষক নতুন জাতের বীজ লাগিয়েছেন তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ভুট্টা চাষীদের চোখে-মুখে এখন হতাশা ফুটে উঠেছে। অনেক আশা করে টাকা লগ্নি করে ভুট্টা চাষ এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আক্ষেপের আরেকটা কারণ হলো, গতবার যে ভুট্টার দাম ছিল ৭০০ টাকা সেই ভুট্টার দাম উঠেছে এখন ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। দাম বাড়লেও ভুট্টা নষ্ট হওয়ায় লাভের আশায় এখন গুড়েবালি।
এবার সদর উপজেলার ধরলা নদীর অববাহিকায় চর সারডোব দিগন্তজুড়ে চাষ করা হয়েছে ভুট্টা। কিন্তু হঠাৎ করে ছত্রাক জাতীয় ব্লাস্ট রোগে ভুট্টার মোচার গোড়ায় পচন ধরায় সেটি অপরিপক্ক অবস্থাতেই মাটিতে পরে বিনষ্ট হচ্ছে। বিভিন্নভাবে ওষুধ স্প্রে করেও মিলছে না প্রতিকার। ফলে অনেক কষ্ট করে যারা ভুট্টা লাগিয়েছেন তাদের মাথায় এখন বাজ পড়েছে। এ ছাড়াও যারা ব্যাংক, এনজিও এবং ধার-দেনা করে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন তারাই এখন ভুট্টার ফলন বিপর্যয়ে হতাশ এবং বিপর্যস্ত! কিভাবে ধার-দেনা মেটাবেন এই দুশ্চিন্তায় কাটছে বিনিদ্র রাত।
চর সারডোব এলাকার ভুট্টা চাষী সামাদ জানান, আমি ২ লাখ টাকা খরচ করে ৪ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার দুই একর ভুট্টা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমার আসল নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে।
সন্নাসী গ্রামের ভুট্টা চাষী নজরুল হোসেন জানান, কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। পরে টাকা সট পরায় লাভের উপর টাকা নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছি। ভেবেছিলাম ভুট্টা তুলে পরে টাকা পরিশোধ করব। এখন দেখি অর্ধেক জমির ভুট্টা শেষ। বাকীটায় ওষুধ স্প্রে করে রক্ষা করেছি। এখন আমি মাঠে মারা গেলাম।
সামাদ ও নজরুল হোসেনের মতো প্রায় একই অবস্থা হয়েছে এখানকার ভুট্টা চাষীদের। স্থানীয় কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে পরির্দশন করে জানিয়েছে, নতুন জাতের ভুট্টা বীজ যারা ব্যবহার করেছেন তারাই বেশিরভাগ ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হয়েছেন। দেরীতে রোগ ধরা পড়ায় ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, হঠাৎ করে ব্লাষ্ট রোগের কারণে প্রায় ১০ হেক্টর জমির ভুট্টা নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে হবে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মো. শামসুদ্দিন মিঞা জানান, আমাদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির কোনও হিসাব নাই। তবে বৃষ্টিতে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ১ হেক্টর ভুট্টা নিমজ্জিত হয়েছে।
এসআইএইচ