জয়পুরহাটে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপলৈ এলাকায় ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দুই থেকে আড়াইশ বিঘা জমির ধান, আম গাছ, জাম গাছ, লিচু গাছ, কলা গাছসহ মৌসুমী ফল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বেশিরভাগ জমিতে ধানের শীষ দেখা দিয়েছে। কিছুদিন পরে কৃষকের ঘরে উঠবে সোনার ফসল। কৃষকরা সেই ধান বিক্রি করে মানুষের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিশোধ করে দুই পয়সা লাভের স্বপ্ন দেখেন। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল এলাকায় ও পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর এলাকার শতাধিক কৃষকের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণিত হয়েছে।
পুরানাপৈল এলাকার কৃষক গাজীউল হক বলেন, 'আমার একবিঘা জমির ধান ও একবিঘা কলা বেলায়েত হোসেন লেবুর ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক টাকা খরচ করে আমরা ফসলগুলো লাগিয়েছিলাম দু'পয়সা লাভের আশায়। এখন আমাদের কী হবে? আমরা এই ভাটার মালিকের বিচার চাই, সেই সঙ্গে আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।'
পুরানাপৈল এলাকার সাইদুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'এই বেলায়েত হোসেন লেবুর ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে আমার ৪ বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষক বলেন, আমি জমি পত্তনি নিয়ে ধান আবাদ করেছি। আমি এখন কীভাবে এই খরচ পুষিয়ে নেব বুঝতে পারছি না। আমরা এই ভাটার মালিকের বিচার দাবি করছি সরকারের কাছে।'
পুরানাপৈল এলাকার কৃষক ও কৃষক প্রতিনিধি বেলাল হোসেন বলেন, এই ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে আমার আড়াই বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তিনি বলেন যতদিন যাচ্ছে নষ্টের পরিমাণ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, 'আমিসহ আমাদের যতকৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।'
সেই সঙ্গে তিনি বলেন, পুরানাপৈলে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৮-৯টি ভাটার কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। সেটিও ক্ষতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন এ কৃষক প্রতিনিধি।
পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর এলাকার কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, প্রতি বিঘা ৭ হাজার টাকা দরে অগ্রিম টাকা দিয়ে অন্যের কাছ থেকে ৭ বিঘা জামি নিয়ে ধান চাষাবাদ করেছি। লাভ তো দূরের কথা এখন খরচের টাকা নিয়ে চিন্তিত। ইটভাটার গ্যাসের কারণে আমার মতো এলাকার বহু কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে সেই দায়ভার নেবে কে? সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
সোনাপুর বিবিসি ইটভাটার স্বত্ত্বাধিকারী আরিফ হোসেন ও আর.বি.এম ইটভাটার মালিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের ইটভাটার কারণেই যে জমির সব ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা ঠিক নয়। তবে তারা বলেন কিছু কিছু জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে সেগুলো আমরা পরে দেখব।
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, সোনাপুর বিবিসি ইটভাটর বিষাক্ত গ্যাসে যেসব জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে মাঠ পরিদর্শন করে সেসব ফসলের ক্ষতির পরিমাণ যেন বৃদ্ধি না পায় সেজন্য স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষকরা যদি এর ক্ষতিপূরণ চেয়ে যথাযথা কতৃপক্ষের নিকট আবেদন করে তাহলে কৃষি বিভাগ তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
জয়পুরহাট সদর উপজলো নির্বাহী র্কমর্কতা (ইউএনও) আরাফাত হোসনে বলনে, এ ঘটনায় কৃষকরা অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নওেয়া হবে। কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।
টিটি/