লালমনিরহাটে টিসিবির কার্ড পেতে গুনতে হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা!
পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে এবং নিম্ন আয়ের ছিন্নমূল মানুষদের কথা বিবেচনা করে টিসিবির পণ্য বিতরণে এবারেই সরকার প্রথম চালু করেছে কার্ড প্রথা। যাতে করে নিম্ন আয়ের মানুষ যথাযথভাবে টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে পারে। তবে কার্ড বিতরণে কোনো টাকা লাগবে না সরকার থেকে বলা হলেও টিসিবির পণ্য ক্রয়ের ফ্যামিলি কার্ড পেতে লালমনিরহাটে গুনতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে। চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি নিজেই খরচ বাবদ কার্ড প্রতি ৩০ টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে চেয়ারম্যান ৩০ টাকা নেওয়ার কথা বললেও ইউপি সদস্যরা কার্ড প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নিচ্ছেন বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই দেশের নিম্ন আয়ের ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে তালিকা প্রণয়ন করার দায়িত্ব পান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। তালিকা চূড়ান্তের পরে সুফল ভোগীদের হাতে ফ্যামিলি কার্ড তুলে দেওয়া হয়। এ কার্ডধারী ব্যক্তিরা আসন্ন রমজানে দুই কিস্তিতে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সুযোগ পাবে। কার্ড ছাড়া কেউ এ সুবিধা পাবে না। তাই স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়ন ও সম্পূর্ন বিনামূল্যে কার্ডে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তালিকা চূড়ান্তের পরে কার্ডধারীদের ছবি সম্বলিত কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে দেওয়া হয়। লালমনিরহাটে লক্ষাধিক পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
কার্ড প্রস্তুত হওয়ার পর ইতিমধ্যে কার্ড পৌঁছে দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এ সুযোগ পেয়ে সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি কার্ড প্রতি খরচ বাবদ ৩০ টাকা করে নিয়ে কার্ড প্রদানে সদস্যদের নির্দেশ প্রদান করেন। চেয়ারম্যানের এমন অলিখিত নির্দেশনার সুযোগ পেয়ে ইউপি সদস্যরা কার্ড প্রতি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
বড়বাড়ি ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের জিনাত আলী বলেন, ইউপি সদস্য আমার আত্মীয়, তারপরও তাকে একশত টাকা দিয়েই কার্ডটি নিতে হয়েছে। টাকা ছাড়া কার্ড কাউকে দেওয়া হচ্ছে না।
একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের শহিদুল ইসলাম বলেন, ৫০০ টাকা মেম্বারকে দিয়ে তবেই এ কার্ড পেয়েছি। কার্ড ছাড়া তো কম দামের পণ্য পাওয়া যাবে না।
এমন অভিযোগ ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে পণ্য নিতে আসা শত শত মানুষের। টাকা ছাড়া মিলছে না টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড। শুধু বড়বাড়ি ইউনিয়নই নয় পাশ্ববর্তি মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নেও কার্ড নিতে সুফলভোগীদের গুনতে হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা।
বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের এক নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফুল আলম বলেন, 'চেয়ারম্যান কার্ডের খরচ বাবদ ৩০ টাকা করে নিতে বলেছেন, তাই নিয়েছি। টাকা ছাড়া চেয়ারম্যান কার্ডে স্বাক্ষর করবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এ সময় কেউ চা খাওয়ার জন্য আরও ১০০ টাকা মিলে মোট ২০০ টাকাও দিয়েছেন।'
বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সরকার কার্ড তৈরির নির্দেশনা দিলেও জনবল বা খরচের জন্য কোনো বরাদ্ধ দেয়নি। ২ হাজার ৪০০ কার্ড তৈরি করতে যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের পারিশ্রমিক বাবদ কার্ড প্রতি ৩০ টাকা নিয়ে ইউপি সদস্যদের হাতে কার্ড বুঝে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কেউ নিয়ে থাকলে তার জবাব সেই দেবে। টাকা নেওয়ার সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকলেও খরচ বাবদ এটা নেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে একটি টাকাও নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কেউ নিয়ে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টিসিবির পণ্য নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদা মাসুম বলেন, সরকারি নির্দেশনায় টিসিবির পণ্য ক্রয়ের কার্ড বাবদ কোনো টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। আপনি ছাড়াও আরেকজন এরকম কথা বলেছেন। এরপরেও কেউ নিয়ে থাকলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিটি/