এক রাতেই অর্ধশতাধিক বিয়ে
চৈত্র মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয় না। তাই শেরপুরে এক রাতেই অর্ধশত বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু একইসাথে এতগুলো বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় পুরোহিত সংকট দেখা দেয়। আর চাহিদা বেড়ে যায় বাদ্যযন্ত্রদেরও।
সংশ্লিষ্ট পুরোহিত ও বিয়ে দেওয়া পরিবারগুলো সূত্রে জানা গেছে, হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী ১৬ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে বাংলা ১৪২৯ সালের চৈত্র মাস। হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী চৈত্র মাসে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না। কিন্তু গত ২৪ ফাল্গুন (বৃহস্পতিবার) ছিল বাংলা ১৪২৯ সালের হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়ের বিয়ের শেষ শুভ দিন। এদিন বিয়ে না হলে বিয়ের পরবর্তী দিনক্ষণের জন্য ১৪৩০ সালের বৈশাখ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে। তাই কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা ও পুত্রের অভিভাবকরা নিজ নিজ সন্তানদের চলতি ফাল্গুন মাসের শেষ শুভ দিনটিতে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দিবাগত গভীর রাতে শেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধশত হিন্দু বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে বিয়ে বাড়ি ও কমিউনিটি সেন্টারগুলো বাদ্যবাজনায় মুখরিত হয়ে উঠে। পাশাপাশি শহরে বিপুল সংখ্যক বরযাত্রীর আগমন ঘটে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বরযাত্রীদের রাত্রী যাপনের জন্য শহরের আবাসিক হোটেলগুলো ছিল পরিপূর্ণ। তবে একদিনে অনেকগুলো বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় বাদ্যযন্ত্রদের ব্যাপক চাহিদা বেড়ে দেয়। আর এই সুযোগে তারা স্বাভাবিক পারিশ্রমিকের চেয়ে পাত্র-পাত্রীর অভিভাবকদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা শহরের তেরাবাজার এলাকার একটি বিয়ে বাড়িতে আসা বরযাত্রী জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বাবন কুমার সাহা জানান, মাত্র ১৫ দিন আগে তার শ্যালকের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বৃহস্পতিবার চলতি বাংলা বছরের বিয়ের শেষ দিন হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই তার শ্যালকের বিয়ে করিয়ে নিলেন। বিয়েতে এসে খুব আনন্দ লাগছে বলে জানান তিনি।
শহরের মুন্সিবাজার এলাকার ব্যবসায়ী রবীন্দ্র চন্দ্র দে জানান, আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই চৈত্র মাস। চৈত্র মাসে কোনো বিয়ে হবে না। তাই তড়িঘড়ি করে ফাল্গুন মাসের বিয়ের শেষ দিনটিতে তার মেয়ের বিয়ে দিলেন।
এ ব্যাপারে শেরপুরের বিশিষ্ট পুরোহিত বাবলু গোস্বামী বলেন, কথায় আছে ‘শুভ কাজে বিলম্ব করতে নেই। চৈত্র মাসে হিন্দু বিয়ে হয় না। আর ফাল্গুন মাসের শেষ দিনটিতে বিয়ে না হলে ছেলে-মেয়ের অভিভাবকদের প্রায় দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে। এতে অনেক সময় নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। তাই এ চিন্তা মাথায় রেখে ছেলে-মেয়ের অভিভাবকরা বৃহস্পতিবারের শুভ দিনটিকে কাজে লাগিয়েছেন। দিনটি ছিল আনন্দের, তাই উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল প্রতিটা বাড়ি।
এসআইএইচ