ঘুষের টাকা ফেরতের ভয়ে মাদ্রাসায় আসেন না সুপার
জামালপুরের বকশীগঞ্জে আয়া পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক বিধবা নারীর কাছ থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মৌলভী পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবদুস সাত্তার, সভাপতি আবদুল হামিদ ও সদস্য ফরহাদুজ্জামান ফোটা। দীর্ঘ ৬ মাসেও চাকরিও দিচ্ছেন না এমনকি টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না তারা। টাকা ফেরত দেওয়ার ভয়ে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন সুপার আবদুস সাত্তার। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুপার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,টাকা ফেরতের দাবিতে সুপারের অফিসের সামনে অবস্থান করছেন ভুক্তভোগী দুই নারী। তবে তারা আসার আগেই সকাল বেলা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে গেছেন সুপার। সেখানেই কথা হয় ভুক্তভোগী নারীর মা নুরুন্নাহারের সঙ্গে।
তিনি জানান, তাদের পরিবার মালিরচর মৌলভীপাড়া দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৩ সালে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯৪ সালে মাদ্রাসায় যোগদান করেন আবদুস সাত্তার। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
মাদ্রাসার সুপার আবদুস সাত্তার ও সভাপতি আবদুল হামিদের পরামর্শে আমার বিধবা কন্যা সুফিয়া আক্তারকে আয়া পদে আবেদন করাই। আবেদনের পর তারা আমার মেয়েকে চাকরী দিবে বলে ৬ লাখ টাকা দাবি করে। আমি তাদের কথায় এবং কন্যার সুখের জন্য তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে রাজি হই।
পরবর্তীতে অনেক কষ্টে ধারদেনা করে মাদ্রাসার সভাপতি আবদুল হামিদ, সুপার আবদুস সাত্তার ও অভিভাবক সদস্য পৌর কাউন্সিলর ফরহাদুজ্জামান ফোটার হাতে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেই। বাকি ৭৫ হাজার টাকা নিয়োগ পরীক্ষা শেষে দেওয়ার কথা জানাই।
পরবর্তীতে জানতে পারি একই পদের জন্য আরেকজন প্রার্থীর কাছে সভাপতি,সুপার ও সদস্য ফরহাদুজ্জামান ফোটা মিলে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি আমি সভাপতি ও সুপারকে জানাই। তারা আমাকে আশ্বস্থ করেন তোমার মেয়ের চাকুরি হবে। তবে অভিভাবক সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর ফরহাদুজ্জামান ফোটা আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন তোমার মেয়ের চাকুরি হবে না। নিয়োগ পরীক্ষার পরের দিন তোমার সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ধারদেনা করে অনেক কষ্টে টাকা দেওয়ার পর চাকরি হবে না শুনে আমি অসুস্থ্য হয়ে পড়ি।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় ৬ মাস পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন সুপার আবদুস সাত্তার। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা,আবেদনকারী ও ডিজি প্রতিনিধি মাদ্রাসায় উপস্থিত হলে স্থানীয় এলাকাবাসী নিয়োগ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। সুপার,সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলও করেন তারা।
এক পর্যায়ে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ফলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এখন আমি তাদের কাছে টাকা ফেরত চাইলে নানা তালবাহানা করে আসছে। আমার টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো আমাকে হুমকি দিয়ে আসছে সুপার। তারা আমার মেয়েকে চাকুরি দিবে না আবার টাকাও ফেরত দিবেনা এমনটাই বলছে। টাকার জন্য প্রতিদিন আসি আর যাই কারো দেখা পাইনা।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার আবদুস সাত্তার বলেন,অফিসিয়াল কাজে অনেক সময় বাইরে থাকতে হয়। তাই হাজিরা দিয়েই চলে আসতে হয়। টাকা দেওয়ার ভয়ে অফিসে যাইনা কথাটা ঠিক নয় বলেই ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সভাপতি আবদুল হামিদ বলেন, ফোনেতো আর সব কথা বলা যায়না,স্বাক্ষাতে বলবোনি বলেই লাইন কেটে দেন তিনি। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরোয়ার আলম বলেন,নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে জেনেছি। সুপার ছুটি না নিয়ে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন,আমি সদ্য এ উপজেলায় যোগদান করেছি। বিষয়টি আমি অবগত নই। বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএজেড