কাঁচা মরিচের পর এবার বেড়েছে সবজির দাম
রমজান মাস আসার আগেই কাঁচা মরিচের বাজারে লেগেছে আগুন। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। গত একমাস ধরে জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্ৰামের বাজারে একই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবে এমনটি প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।
নেত্রকোনার বিভিন্ন গ্রামের বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০- ১৫০ টাকায়। নেত্রকোনার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জের বাজারে বেচা-বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। একইসাথে বাজারে বেড়েছে সবজির দাম। রমজান আসার আগেই এরকম মূল্য বৃদ্ধি মেনে নিতে পারছেন না ক্রেতা সাধারণ।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার বড় বড় সবজি বাজারে ১৫০ টাকায় বিক্রি দাম হলে পাড়ার দোকান ও ছোট ছোট বাজারে ২০০ টাকার নিচে মিলছে না কাঁচা মরিচ। এতে অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে তর্কাতর্কির সৃষ্টি হচ্ছে প্রায়ই। বাজার মনিটরিং নিয়মিত হচ্ছে না বলে জানান ক্রেতারা।
অনেকে বাধ্য হয়ে শুকনো মরিচ দিয়েই কাঁচা মরিচের চাহিদা পূরণ করছেন। শুকনো মরিচের দাম ও নাগালের বাইরে।এদিকে বাজারে অন্য সবজির দাম কিছুটা কম থাকায় হাফ ছেড়ে বাঁচছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। কমেনি বাঁধা কপির দাম। এখনো প্রতি পিস কপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা করে।
সরেজমিনে জেলার মাছুয়া বাজার ও রেলক্রসিং বাজারসহ রবিবার বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বেগুন কেজি প্রতি জাতভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, চিচিংগা ৪০ টাকা,গাজর ৪০ টাকা, শসা হাইব্রিড ৩০ টাকা, দেশী শসা ৩০-৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, করলা ৫০-৬০টাকা, পেপে ৩০ টাকা ও টমেটো ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নতুন চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ১০০টাকা কেজি দরে।এদিকে বাজারে চালকুমড়া আকার ভেদে প্রতিপিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০ টাকা, কেজি দরে। এছাড়া লেবুর হালি ৩০থেকে ৪০ টাকা, গোল আলুর কেজি ৩০ -৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন বাজারের সবজি বিক্রেতারা জানান, কাঁচামরিচের দাম পাইকারি বাজারেও বেড়েছে। তাই আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি। আমরা কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ করে থাকি। পাইকারি বাজারে দাম না কমলে আমাদের কিছু করার নেই। তবে অন্য সবজির দাম অনেক কমেছে।
তারা আরও জানান, জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বেচা বিক্রি হচ্ছে। কেন্দুয়া পৌর শহরের হাট-বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শ্যামগঞ্জ বাজার, হিরণপুর বাজার, ঠাকুরাকোণা বাজার, ফকিরের বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে কাঁচা মরিচ ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছুয়া বাজারে কয়েকজন কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় এবং চাহিদা অনুযায়ী বাইরে থেকে আমদানি কম হওয়ায় কাঁচা মরিচের বাজার এতটা বেড়ে গেছে। তারা আরো জানান, নেত্রকোনায় ,চুয়াডাঙ্গা, নগরবাড়ী, রাজবাড়ী, পাবনা, রাজশাহীসহ নানা স্থান থেকে আমরা কাঁচা মরিচ আমদানি করে থাকি। ওইসব এলাকায় অন্য সময় এক থেকে দেড় শ’ মরিচের আড়ৎ খোলা থাকত।
এবার মাত্র কয়েকটি আড়ৎ খোলা রয়েছে। যে কারণে আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। সেখানেই দাম বেশি। মরিচের সিজন শেষ পর্যায়ে। এ সময় এমনিতেই কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বেশির ভাগ মানুষ শুকনো গুড়া মরিচ রান্না-বান্নায় ব্যবহার করছেন। গত এক-দুই সপ্তাহ আগেই এখানকার হাট-বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বেচা-কেনা হয়েছে। অনেকে এক পোয়া আধা পোয়া মরিচ কিনছেন হাট-বাজারে। এসব বাজারে যেসব মরিচ বিক্রি হচ্ছে তার মানও তেমন ভালো না।
গরীব অসহায় দিন মজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা হাট-বাজারে পচা আধা পচা বা উচ্ছিষ্ট কাঁচামরিচ কম দামে পেয়ে কিনে বাড়ি-ঘরে ফিরছেন। আগে যারা এক কেজি আধা কেজি কাঁচা মরিচ কিনতেন এখন তাদেরকে এক পোয়া আধা পোয়া কিনতে দেখা যাচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে পড়েছে নেত্রকোনার নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ইতোমধ্যে আমি বাজারে জিনিসপত্রের দামের বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। এসময়ে কাঁচা মরিচের আমদানি কম। তবে বাজারে মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।অসাধু ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এএজেড