হাওরে বাঁধ নির্মাণ না করায় বন্যার ঝুঁকিতে ৫০০ একর জমির ধান
নেত্রকোনা জেলার শস্যভান্ডার হিসাবে পরিচিত মোহনগঞ্জ উপজেলার হাওর অঞ্চল ডিঙ্গাপোতা হাওর। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় এ হাওরটি। সাতমা ধলাই নদীর সংযোগ রক্ষাকারী খেওয়ালী খালের বাঁধ নির্মাণ না করায় বন্যার কবলে পড়ে হাওরের ফসল। এ মৌসুমে খালের ওপর নির্মাণ করা হয়নি বাঁধ। ফলে হাওরের ৫০০ একর জমির ধান আগাম বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার সাতমা ধলাই নদীর সংযোগ রক্ষাকারী খেওয়ালী খালটি শীত মৌসুমে শুকিয়ে যায়। কিন্তু চৈত্র মাসের শুরুতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ধলাই নদী হয়ে খাল দিয়ে ডিঙ্গাপোঁতা হাওরে প্রবেশ করে। এতে হাওরে থাকা বোরো ফসল তলিয়ে যায়। প্রতিবছর বাঁধটি নির্মাণের জন্য কৃষকেরা।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এখনো আমলে নেয়নি। নিরুপায় হয়ে কৃষকেরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে খেওয়ালী খালের বাঁধটি নির্মাণ করে ফসল রক্ষার চেষ্টা করে আসছেন। এবারও তাঁরা বাঁধটি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। উপজেলার করাচাপুর গ্রামসংলগ্ন ওই খালে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ফুট দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণের অভাবে কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলার করাচাপুর গ্রামের কৃষক কাজী রুমেন, শেখ রিয়াদ, নেছার মিয়া ও আবুল কালাম। তাঁরা জানান, গত বছরও বাঁধটি দেওয়ার জন্য পাউবো কর্মকর্তাদের বলেন। তাঁরা বিষয়টি আমলে নেননি। পরে চৈত্র মাসে এই খাল দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করলে কৃষকদের টাকায় ভ্যাকু দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়। এবারও এই খালে কোনো বাঁধ দেওয়া হয়নি।
কৃষক সিরাজ। মিয়া বলেন, ডিঙ্গপোঁতা হাওরে এবার প্রায় ১৫ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কিন্তু খেওয়ালীর খালের মাঝামাঝি স্থানে বিকল্প বাঁধ না দেওয়া হলে চৈত্রের শুরুতে পাহাড়ি ঢলের পানি খাল দিয়ে হাওরে ঢুকে বছরের একটি মাত্র বোরো ফসল তলিয়ে দেবে। সারা বছর না খেয়ে থাকতে হবে।
উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফারুক আহম্মেদ সিদ্দিকী বলেন, খালটি পাউবোর অধীন। কিন্তু কোনো বছরই পাউবো খালটিতে বাঁধ দেয় না। প্রতিবছর বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানি খেওয়ালী খাল দিয়ে হাওরে প্রবেশ করলে কৃষকেরা নিজের টাকা ব্যয়ে মাটি কেটে বাঁধটি দেন। কৃষকেরা নিজেদের ফসল রক্ষায় বাঁধ দেন। তাঁরা সরকারিভাবে বাঁধটি নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই।
নেত্রকোনা জেলা পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ফসল রক্ষায় পাউবোর তত্ত্বাবধানে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ২০৬টি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব বাঁধের দৈর্ঘ্য ২১৬ কিলোমিটার। আর এ কাজের বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। শেষ হবে চলতি মাসের ২৮ তারিখে।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন বলেন, খেওয়ালী খালে একটি বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে বছরের শুরুতে বাঁধটি নির্মাণের জন্য আবেদন করার দরকার ছিল। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বাঁধটি নির্মাণের চেষ্টা করব।
মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, খেওয়ালী খালে বাঁধ নির্মাণ খুব জরুরি। সে জন্য পাউবোকে বলেছি।তারা অবশ্যই অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। এখন হাতে সময় কম। এদিকে বরাদ্দও নেই। তার পরও দেখি কী করা যায়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলাকার কৃষকরা যাতে সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে পারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এএজেড