প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জে ২২০ অংকের ‘ডিজিটাল’ ভোগান্তি
শেরপুরে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গ্রাহকরা। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে গেলে টোকেনে ২২০ ডিজিট আসে। এতে সবগুলো অর্থাৎ ২২০ ডিজিটই মিটারে প্রবেশ করিয়ে টাকা রিচার্জ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
তারা বলছেন, ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল ভোগান্তি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ আগে মিটারে টাকা রিচার্জের ক্ষেত্রে সাধারণত ২০ ডিজিটের একটি টোকেন পেত গ্রাহকরা। সেই টোকেনটি মিটারে প্রবেশ করালেই রিচার্জ সম্পন্ন হতো। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন আগেও পিডিবির প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করত খুব সহজে। রিচার্জের জন্য গ্রাহকরা বাড়ির আশপাশের বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা পিডিবির অফিস থেকে রিচার্জ করত। এতে গ্রাহকরা ২০ ডিজিটের একটি টোকেন নম্বর পেত। সেই টোকেন নম্বরটি মিটারে প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গে মিটারে টাকা রিচার্জ সম্পন্ন হতো। কিন্তু সম্প্রতি রিচার্জ করতে গেলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০/১২ গুণ অর্থাৎ ২২০ডিজিটের একটি লম্বা টোকেন আসে। এই টোকেনের সবগুলো নম্বরটি মিটারে প্রবেশ করিয়ে রিচার্জ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে তিনবার ভুল হলে মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
ভুক্তভোগী বাবু চক্রবর্তী, শহিদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল ভোগান্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। দ্রুত এর সমাধান চাই আমরা।
শহরের চাপাতলী মহল্লার ভুক্তভোগী আরিফ হোসেন বলেন, ‘মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে বর্তমানে যা তা একটা অবস্থা, উপরে থাকে মিটার, সেই মিটারে এত বড় টোকেন উঠাতে গিয়ে আমরা নিজেরেই ক্লান্ত এখন। অথচ আগে মাত্র ছোট একটি কোড আসত, সেই কোড মিটার উঠালেই রিচার্জ সম্পন্ন হতো, এখন তো আর সেভাবে হচ্ছে না। এটা ভোগান্তি না চরম তামাশা।’
পৌর শহরের কাঠগর মহল্লার বাসিন্দা ভুক্তভোগী মুন্নাফ মিয়া বলেন, ‘আমি মুর্খ (অক্ষর জ্ঞানহীন) মানুষ, এত কিছু বুঝি নে, এতগুলা নম্বর টিপপার (তুলতে) যাইয়ে (গিয়ে) উল্টাপাল্টা হয়ে মিডার (মিটার) লক হয়ে গেছিল। পরে অফিসতনে (অফিস থেকে) লোক আইনে (এনে) ঠিক করছি।’
আরেক ভুক্তভোগী শেরীপাড়া মহল্লার ইকবার মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কী আর বলব ভাই, এই ডিজিটাল সময়ে ডিজিটাল ভোগান্তি আমার আর হয়নি। এরকম লম্বা টোকেন উঠাতে গিয়ে আমার একবার মিটার লক হয়ে গেছিল। এটা শুধু আমার না, আশপাশের মানুষেরও একই অবস্থা। এর থেকে আমরা রেহাই চাই। খুব সহজে যেন রিচার্জ করতে পারি, আপনারা সরকারের নজরে এনে ব্যবস্থা করে দেন।’
এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে কথা হয় পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত রায়ের সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘এই সমস্যাটা আসলে শুধু শেরপুরে না, সব জায়গায়। মূলত বিদ্যুতের দাম যখন বেড়ে যায়, তখন এই কোডগুলো আসে। শুধু একবারই এই কোড আসবে, পরবর্তী সময়ে আর আসবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি আমাদের জানান তাহলে আমরা অফিস থেকে লোক পাঠিয়ে তা ঠিক করে দেই। শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের মুঠোফোনে আমরা সকল ধরনের পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছি। গ্রাহকরা যেন কোনো ভোগান্তির শিকার না হয় এজন্য আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। তাদের নির্দেশেই আমরা গ্রাহকদের সেবা করে যাচ্ছি।’
এসএন