টঙ্ক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং অসুস্থ
ব্রিটিশ শাসনামলে ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের অকুতোভয় সৈনিক কুমুদিনী হাজং। এক সময় জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুকে দাঁড়ানো এই নেত্রীর এখন হাঁটাচলা করতেও কষ্ট হয়। কয়েকদিন ধরে আরও বেশি দুর্বল হয় পড়েছেন। উন্নত চিকিৎসাসেবা পেলে খানিকটা ভালো থাকতে পারবেন বলে স্বজনদের দাবি।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এখন বহেরাতলী গ্রামের গাছগাছালিতে ভরা একটি পাহাড়ি টিলায় থাকেন। সঙ্গে থাকেন মেজ ছেলে অর্জুন হাজং ও তার পরিবার। মাঝে মাঝে একাকীত্বে ভোগেন তিনি। কথা বলার লোকজনও তেমন নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, অসুস্থ শরীর নিয়ে রোদে বসে আছেন কুমুদিনী হাজং। চোখে কম দেখেন, কানেও কম শোনেন তিনি। কেমন আছেন, জানতে চাইলে মৃদু স্বরে হাজং ভাষায় জবাব দিলেন। ছেলে অর্জুন পাশ থেকে অনুবাদ করে জানালেন, ‘শরীর বেশি দুর্বল লাগে। খাওয়া দাওয়া কিছু ভালো লাগে না। শ্বাস ফেলতে ও ভীষণ কষ্ট হয়। বাঁচার সাধ নেই। মরতেও পারছি না।’
তৎকলীন ময়মনসিংহের সুসং জমিদারের খাজনা টঙ্ক আদায়ের প্রথা চালু ছিল। জমিতে ফসল হোক আর নাই হোক, পাওনা খাজনা জমিদারকে দিতেই হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হতো না। খাজনা না দিলে চরম শাস্তি দেওয়া হতো। ১৯৩৭ সালে শোষিত কৃষকেরা এ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, যা টঙ্ক আন্দোলন নামে পরিচিত।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বরের মৃত্যু হয়। তাদের তিন ছেলে, দুই মেয়ে। বড় ছেলে লমিন হাজং থাকেন একটু দূরে, বিজয়পুরের গুচ্ছগ্রামে। ছোট ছেলে সহদেব হাজং মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতে চলে গেছেন। বড় মেয়ে মেনজুলি হাজং মানিকগঞ্জে ও ছোট মেয়ে অঞ্জলী হাজং থাকেন ঢাকায়। সরকারিভাবে থাকার জন্য ঘর করে দেওয়া হয়েছে। দুস্থভাতা ছাড়া ও বিভিন্ন ধরনের সহায়তা পান তিনি।
বেসরকারি সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) থেকে কুমুদিনীকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রতি মাসে একজন চিকিৎসক তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে কুমুদিনী হাজংকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। এ ছাড়া তিনি অনন্যা শীর্ষ দশ (২০০৩), ড. আহমদ শরীফ স্মারক (২০০৫), কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি পদক (২০০৭), সিধু-কানু-ফুলমণি পদক (২০১০), জলসিঁড়ি (২০১৪) ও হাজং জাতীয় পুরস্কার (২০১৮) পেয়েছেন। ছেলে অর্জুন বলেন, অনেক জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী তার মাকে সম্মান দিয়েছেন, খোঁজ নেন।
মুঠোফোনে কথা হয় দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব উল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কুমুদিনী হাজংকে সরকারিভাবে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রকার ভাতা পান তিনি। অসুস্থতার কথা জেনে আজ আমি সরাসরি দেখতে যাচ্ছি আমি। চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
প্রবীণ সাংবাদিক বাবুল সরকার বলেন, টঙ্ক আন্দোলনে হাজং সম্প্রদায়ের অনেক ত্যাগ আছে। তারা ব্রিটিশদের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। এই অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে কুমুদিনীকে একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এসএন