প্রয়োজনীয় লোকবল-সরঞ্জাম নেই বকশীগঞ্জ হাসপাতালে
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে সাত বছর আগে। হাসপাতালটির বেড সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান। পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে উন্নতি হয়নি চিকিৎসা সেবার। ৫০ শয্যা তো দূরের কথা ৩১ শয্যার লোকবলের সংকটই কাটেনি এখনো। তাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। ছোটখাটো সমস্যার জন্যও যেতে হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা মানহীন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলার ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ ছাড়াও ভৌগলিক কারণে শ্রীবরদী, রাজিবপুর, রৌমারী ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের ৪-৫ টি ইউনিয়নের মানুষ বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫-৬শ’ রোগী এই হাসাপতালে চিকিৎসা সেবার জন্য আসে। প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৭ জন। এ অঞ্চলের মানুষের কথা ভেবে ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর ৩১ শয্যার এই হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ৫০ শয্যা হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের ৭ বছরেও চালু হয়নি ৫০ শয্যার কোনো কার্যক্রম। দেওয়া হয়নি ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি। বাড়ানো হয়নি সুযোগ-সুবিধা। ৩১ শয্যার হাসপাতালে যে জনবল ও যন্ত্রপাতি থাকার কথা, সেটিও নেই। ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা জরুরি রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম না থাকায় এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ইনডোর চালু করতে যে জনবল ও সাজ-সরঞ্জাম প্রয়োজন তার কোনোটাই এখানে নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালে আসার অধিকাংশ রোগীকে রেফার করা হয় ময়মনসিংহ কিংবা ঢাকায়। ফলে চিকিৎসার ব্যয় বহনে অপারগ রোগীদের বিনা চিকিৎসায় মরতে হচ্ছে। বহির্বিভাগে রোগীদের আসা-যাওয়া আর পরামর্শ নেওয়াই হলো নামে মাত্র ৫০ শয্যা এ হাসপাতালের নিত্যদিনের চিত্র।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার জন্য শুধু প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ চিকিৎসা কর্মকর্তা থাকার কথা ২৬ জন। ২৬টি পদের মধ্যে ১৯টি পদই শূন্য। জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলোজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক, কান, গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), অ্যানেসথেসিয়া, অ্যান্সেথেটিক্স বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
এ ছাড়াও ইনডোর মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিস্ট, নার্সিং সুপারভাইজার একজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স সাতজন, মিডওয়াইফ তিনজন, মেডিকেল টেকনিক্যাল ল্যাব একজন, ফার্মাসিস্ট, প্রধান সহকারী, হিসাব রক্ষক, কার্ডিওগ্রাফার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর একজন, ইমার্জেন্সি অ্যাটেনডেন্ট, ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট একজন, ওটি বয় একজনের পদ শূন্য রয়েছে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে।
সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে যেতে হয় গন্তব্যের হাসপাতালে। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও নেই মেশিনপত্র। ছোট খাটো কোনো অপারেশনের জন্য যেতে হয় জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে। আল্ট্রা মেশিন থাকলেও তার ব্যবহার হয়নি কোনোদিন। ইসিজি মেশিন রয়েছে তবে জরুরি প্রয়োজনে বেশিরভাগ সময়ই থাকে বিকল। জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বরাদ্দ না পাওয়ায় উদ্বোধনের ৭ বছরেও ৫০ শয্যার কোনো কার্যক্রমই চালু হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ভাটি কলকীহারা গ্রামের মালেকা বেগম, আলম মিয়া, কামালপুর এলাকার মর্জিনা খাতুনসহ বেশ কয়েকজন রোগী জানান, এই হাসপাতালে সময়মতো ডাক্তার পাওয়া যায় না। তা ছাড়া সব ওষুধ এখানে পাওয়া যায় না। বেশির ভাগই বাইরে থেকে কিনতে হয়।
বকশীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি শাহীন আল আমীন বলেন, নামেই ৫০ শয্যা হাসপাতাল। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে ডাক্তার পাওয়া যায় না। জরুরি বিভাগে থাকা ওয়ার্ড বয় ও ঝাড়ুদাররা ফোন করলে ডাক্তার আসে। ততক্ষণে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। আবার ডাক্তার এলেও ততটা দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে রেফার করেন সদর হাসপাতালে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে নিয়ে যেতে হয়। ৫০ শয্যার সব কার্যক্রম চালু করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, চিকিৎসকসহ জনবল সংকট এবং অন্যান্য সমস্যা থাকলেও আমরা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুতই এর সমাধান হবে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল থাকায় ভাড়াটে একটি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসএন