ভিন্ন ধর্মের ছেলের সঙ্গে প্রেম করেছিলেন এক তরুণী। এটাই তার ‘অপরাধ’। আর সেই ‘অপরাধের’ সাজা হিসেবে প্রাণ দিতে হলো তাঁকে—আর কেউ নন, খুন করেছেন তার জন্মদাতা পিতা নিজেই। ভারতের বিহার রাজ্যের সমস্তিপুর জেলায় ঘটেছে এমনই এক নির্মম ঘটনা, যা স্তম্ভিত করেছে সাধারণ মানুষকেও।
নিহত ওই তরুণীর নাম সাক্ষী সিং, বয়স ২৫ বছর। কলেজে পড়ার সময়ই প্রেমে জড়ান স্থানীয় এক মুসলিম তরুণের সঙ্গে। প্রেমটা ছিল পরিণয়ের দিকেই, কিন্তু পরিবার, বিশেষ করে সাক্ষীর বাবা মুকেশ সিং কখনোই মেনে নিতে পারেননি এই সম্পর্ক। পরিবার ছিল কট্টর রক্ষণশীল ও ধর্মীয় ভাবনায় আচ্ছন্ন।
গত ৪ মার্চ প্রেমিকের হাত ধরে দিল্লিতে পালিয়ে যান সাক্ষী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁর বাবা। মেয়েকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনার জন্য নানা নাটকীয়তা করেন মুকেশ। শেষ পর্যন্ত মেয়েকে ‘মাফ’ করার নাটক করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। সাক্ষীও হয়তো ভেবেছিলেন—সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। কিন্তু তিনি জানতেন না, তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এক নির্মম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।
বাড়ি ফেরার কয়েকদিন পর হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান সাক্ষী। মেয়েকে না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তাঁর মা। মেয়েকে কোথায় নিয়ে গেছেন—এই প্রশ্নে উত্তরে মুকেশ বলেন, "সাক্ষী আবার পালিয়েছে।" কিন্তু মায়ের সন্দেহ দানা বাঁধে। এরপরই তিনি থানায় অভিযোগ করেন। বুধবার রাতে পুলিশ যখন তদন্তে সাক্ষীর বাড়িতে আসে, তখন একাধিক ঘর ছিল তালাবদ্ধ। সবচেয়ে সন্দেহজনক ছিল শৌচাগার। সেখান থেকে বেরোচ্ছিল তীব্র দুর্গন্ধ। পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পায় সাক্ষীর গলাকাটা মরদেহ। মরদেহটি আংশিক পচে-গলে গিয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত নিজের অপরাধ কবুল করেন মুকেশ। জানান, মেয়ের প্রেম মেনে নিতে পারেননি বলেই তাকে হত্যা করেন। পুলিশ বলছে, হত্যার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। এর আগেও মেয়ের প্রেমিককে খুন করতে গিয়েছিলেন তিনি, তবে তখন যুবকটি বাড়িতে ছিলেন না।
ঘটনার পর এলাকায় নেমে আসে শোক আর ক্ষোভ। প্রতিবেশীরা বলেন, “মেয়েটা চুপচাপ স্বভাবের ছিল, কারও সঙ্গে ঝামেলাও করত না। ভাবতে পারছি না নিজের বাবাই এমনটা করতে পারে!”
পুলিশ ইতোমধ্যে মুকেশ সিংকে গ্রেপ্তার করেছে। হত্যার উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা, এবং আরও কেউ এর সঙ্গে জড়িত ছিল কি না—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহতের মা ও মামার দেওয়া জবানবন্দিও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে।