চারশত বছর পেরিয়ে গেল দশভূজা মন্দিরের পূজা
নেত্রকোনা সীমান্তে দুর্গাপুরে এখন রাজার বাড়ি নেই। সেনাপতি সৈন্য সামন্ত হাতি, ঘোড়া কিছুই নেই। প্রহরী পাইক পেয়াদা দ্বার রক্ষক নেই। এখন দুর্গাপুরের রাজবাড়ির দশভূজা মন্দিরের। এক সময়ে এখানে বসবাস করতেন প্রতাপী রাজা রঘুনাথ রায়। তিনি এখন ইতিহাস হয়েছেন। সময়ের পরিবর্তনে দুর্গাপূজা আজ রাজ রাজড়া শ্রেণীর পূজা থেকে সার্বজনীন পূজায় রুপ নিয়েছে। দশভুজা মন্দিরে দুর্গাপুজা উদযাপন চারশত বছর পেরিয়ে গেছে। ধারণা করা হয় একসময় এখান থেকেই প্রথম দুর্গাপূজোর প্রচলন হয়েছিল তৎকালীন ময়মনসিংহসহ এ অঞ্চলে।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে তৎকালীন সুসঙ্গ রাজ্যের রাজা রঘুনাথ রায় আকবরের নির্দেশে, বাংলায় মোঘল সাম্রাজ্যের বিরোধীতাকারী বারো ভূঁইয়ার অন্যতম বিক্রমপুরের প্রতাপশালী রাজা কেদার রায়ের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন (১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে)। এবং কেদার রায়কে যুদ্ধে পরাজিত করে তার রাজ্য থেকে একটি অষ্টধাতুর তৈরী দুর্গা মূর্তি সুসঙ্গ রাজ্যে নিয়ে এসে রাজমন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই মন্দিরটিই দশভূজা মন্দির নামে সুপরিচিত। তখন থেকেই সুসঙ্গ নামের সাথে দুর্গাপুর নামটি যোগ হয়।
১৯৫৪ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেলে এই মন্দিরটি অরক্ষিত হয়ে যায়,এবং সেখানে রক্ষিত অষ্টধাতুর মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখানে অন্য মূর্তি স্থাপন করা হয়। দশভূজা মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত ধনেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের পূর্ব পুরুষেরা এই রাজমন্দিরেরই সেবায়েত ছিলেন।বংশানুক্রমে তারাই পূজার্চনা করে আসছেন। তিনি জানান, মন্দিরে বিগ্রহ স্থাপন হওয়ার পর থেকে একমাত্র ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময় ব্যাতীত প্রতিবছরই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।”হিসেব করে দেখা যায় এবছর নিয়ে চারশো আঠারতম বছর পার করছে দশভূজা মন্দিরের দুর্গাপূজা।
প্রাচীন এই মন্দিরের পূজা দেখতে প্রতিবছরই দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা ভিড় করেন এখানে। মন্দিরটি বর্তমান দুর্গাপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে সুসঙ্গ কলেজের দক্ষিণে অবস্থিত। জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জ্ঞানেশ সরকার জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ডপের মতো দশভুজা মন্দিরে ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বেশ সোচ্চার রয়েছে। সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
এএজেড