টানা তিনদিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট অ্যালার্ট জারি
টানা তিনদিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
তিনদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ জেলায় হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তিনদিন আগে জারি করা হিট অ্যালার্ট আগামী সপ্তাহজুড়ে এ জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে এ জেলায়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৫ শতাংশ। সকাল ৯টায় ছিল ৩০.৬ ডিগ্রি। এরপর দুপুর ১২টায় ৩৯.০ ডিগ্রি। সন্ধ্যা ৬ টায় রেকর্ড হয়েছে ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সকালের সূর্য ওঠার সময়ও প্রখর তেজ থাকছে। এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ।
এ সময় রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। আগুন ঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা বিরাজ করছে সূর্য একেবারে পাটে পড়ার আগ পর্যন্ত। একদিকে ভ্যাপসা গরম অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং- মরার উপর খাড়ার ঘা হয়েছে এ জেলাবাসীর জন্য।
সূর্য পাটে পড়ে গেলেও কমছে না তার তেজ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পরপর তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হলো দক্ষিন-পশ্চিশের জেলা চুয়াডাঙ্গায়।
তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন ওষ্ঠাগত। এপ্রিল মাসে এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপ প্রবাহের প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। তাপপ্রবাহের ফলে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষ । তীব্র তাপদাহে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীও বাড়ছে।
এদিকে কৃষি সমৃদ্ধ চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপদাহ খরার কারণে কৃষিতে সংকট দেখা দিয়েছে। বোরো মওসুমে ধান কাটার সময় এসেছে। ধান কাটা শুরুও হয়েছে। তবে প্রচণ্ড রোদে মাঠে দাঁড়াতে পরছেনা কৃষক-মজুর। এ ছাড়াও কিছু এলাকায় ধানের ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড খরায় আম-লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। সব ফসলে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৯ টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৬.৫। এরপর বেলা ১২ টায় ৩৪.৫ডিগ্রী। দুপুর ৩টায় ৪০.৭ ডিগ্রি। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টায় ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বোচ্চ।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। এদিন দুপুর ১২ টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯ টায় ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৩ শতাংশ।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস,বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫০ শতাংশ। এদিন দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস,সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ। বিকাল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৩ শতাংশ। প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রাও পারদও বেড়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. জামিনুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। বর্তমানে তীব্র তাপদাহ চলছে এ জেলায়। আপাতত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এপ্রিল মাস জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করার সম্ভবনা রয়েছে।