খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে কৌশল বদলাল আওয়ামী লীগ
খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সন্তোষজনক উপস্থিত নিশ্চিত করতে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই বিএনপির কয়েকজন নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। আবার মেয়র কাউন্সিলর পদে নিশ্চিত বিজয় বা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে এসেছে অনেকে। রাজপথে ১০ দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে লাভ-ক্ষতির হিসাব মিলাচ্ছে। অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি। এরই মধ্যে কৌশল বদলে প্রতি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নিজেদের একাধিক প্রার্থী রেখেছে দলটি। যাতে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আনতে তৎপর হয়।
জানা যায়, নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১৪৯ জন। এ ছাড়া ১০টি সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন আরও ২৯ জন। প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মে) মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ২৫ মে প্রত্যাহারের শেষ সময় ও ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ১২ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বিএনপি ঘরোনার সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন-১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান কাকন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শমসের আলী মিন্টু, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মাজেদা বেগম ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহাবুব কায়সার। তাদের মধ্যে কাকন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি আহ্বায়ক। মাহাবুব কায়সার আগেই দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। শমসের আলী মিন্টু ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সাবেক সভাপতি। তবে মাজেদা খাতুন বিএনপির কোনো কমিটিতেই নেই। এ ছাড়াও কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও সরে এসেছেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির আহ্বায়ক ও পরপর দুই বার নির্বাচিত কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান মনি। এবারও নির্বাচনে তার জয়ের সম্ভাবনা ছিল।
এদিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, দলের প্রতিটি সভায় নেতাদের বার বার নির্বাচনে অংশ না নিতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা কাউন্সিলরদের বোঝানো হয়েছে। যারা কথা শোনেননি তাদের বহিষ্কার করা ছাড়া উপায় নেই। তবে অধিকাংশ ত্যাগী নেতা দলের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন।
অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক করতে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিটি ওয়ার্ডে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে উদ্বুদ্ধ করতে বলা হয়।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, সাধারণ মানুষ চায় খুলনার উন্নয়ন। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। এরপর চায় আইন শৃঙ্খলা যাতে ভালো থাকে এবং সন্ত্রাসমুক্ত ও ভূমিদস্যুমুক্ত নগর। এই কাজগুলো গত পাঁচ বছরে খুলনায় হয়নি। আমরা মাদকমুক্ত খুলনা চাই। এ ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তারপরেও আমি মনে করি সব সমস্যার সমাধান হয় নাই। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে বাকিটা সমাধান করার আপ্রাণ চেষ্টা করব।
খুলনাবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে ভোটের দিন অবশ্যই ভোট সেন্টারে ভোট দিতে যাবেন। আমাদের দলীয় একটা পার্সেন্টিজ আছে। এর সাথে সাধারণ ভোটারও আছে তাতে আমি মনে করি অন্তত ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ ভোট কাস্ট হবে।
অপরদিকে মেয়র নির্বাচিত হলে সন্ত্রাস-মাদক-দুর্নীতিমুক্ত নগর গড়তে কাজ করার অঙ্গীকার করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-দুর্নীতি দমন না করতে পারলে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সর্বপ্রথম কাজ করতে হবে সন্ত্রাস নির্মূলে।
তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময়কালে বলেন, বর্তমানে খুলনায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজরা প্রভাব বিস্তার করেছে। সন্ত্রাস ও মাদকের প্রভাবে নগরবাসী স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। নির্বাচিত হলে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম গঠনের মাধ্যমে সন্ত্রাস মাদক নির্মূলে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
এসআইএইচ