মোংলা বন্দরে অ্যালার্ট-২ জারি, পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলের দিলে ধেয়ে আসছে। ঝড়টি মোংলা বন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এমতাবস্থায় মোখার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় প্রস্তুতি নিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, কোস্টগার্ড। নিরাপদ অবস্থানে আনা হচ্ছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের যুদ্ধ জাহাজগুলো। এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব অ্যালার্ট-২ জারি করেছে। মোখার প্রভাবে মোংলার পশুর নদী দিয়ে সুন্দরবনের করমজলসহ বিভিন্ন এলাকায় পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হারুনুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটা এখন চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মোংলায় ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত বহাল রয়েছে। তবে অন্য এলাকায় সংকেত বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শাহিন মজিদ বলেন, বন্দরে নিজস্ব সতর্ক সংকেত অ্যালার্ট-২ জারি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বন্দরে থাকা জাহাজগুলোকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত বন্দরে অবস্থানরত কয়েকটি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হয়েছে। এই মুহূর্তে ৭টি বিদেশি জাহাজ এবং ১১টি দেশি জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজ ও জাহাজের পাশে অবস্থান করা পণ্য নিতে আসা ছোট লাইটার, বার্জ ও কোস্টাগুলোকেও নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বন্দরের একটি নিজস্ব সতর্ক সংকেত ব্যবস্থা রয়েছে। এটা সর্বোচ্চ ৪ পর্যন্ত উঠতে পারে। বর্তমানে বন্দরে ২ নম্বর অ্যালার্ট চলছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, সতর্ক সংকেত অ্যালার্ট-৩ এ পৌঁছালে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২টি রেঞ্জ অফিসের আওতায় ১৬টি স্টেশন ও ৬৩টি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। এসব স্টেশন ও ফাঁড়িতে দায়িত্বে থাকা বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষয়ক্ষতির কবল থেকে জানমাল রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্টেশন ও ফাঁড়িতে দায়িত্বরতদের ঝড়ের অবস্থান বুঝে নিরাপদে আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানিয়েছেন, করমজলে বন্যপ্রাণীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের সদর দপ্তরের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কমান্ডার তারেক আহমেদ বলেন, উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সতর্কবার্তা প্রচার চলছে। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলগুলো সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়ার পাশাপাশি কোস্টগার্ড স্টেশনে আশ্রয় দেওয়া হবে।
যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্টগার্ডের সব জাহাজ, বোট, স্টেশন, আউটপোস্ট এবং ডিজাস্টার রেসপন্স ও রেসকিউ টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের একটি জোনাল অফিস ও ১৪টি স্টেশনে কর্মরতদের এবং যুদ্ধ জাহাজগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর দাশ জানিয়েছেন, মোংলায় ১০৩টি সাইক্লোন শেল্টার ও উঁচু স্কুল ভবনগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝড়ের আগে ও পরে স্থানীয়দের সহায়তা করার জন্য ১ হাজার ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। শুকনো খাবার মজুদ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। একটি কন্ট্রোল রুম খুলে এর মাধ্যমে ঝড়ের অবস্থা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বাগেরহাটে ৮৪টি মেডিকেল টিম, ১ হাজার ৯২০ জন সিপিপি সদস্য, ৫০০ রেড ক্রিসেন্ট সদস্য, রোভার, বিএনসিসি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও, প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন ও প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেখানে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া ত্রাণ প্রদানের জন্য ৫২২ দশমিক ৮০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এসজি