গরমে দিনে ফাঁকা ঈদ বাজার, রাতে বাড়ছে বেচাকেনা
আর মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় জমে উঠেছে ঈদ বাজার। গরমে দিনের বেলা বাজার ফাঁকা থাকলেও রাতে বাড়ছে বেচাকেনা। প্রচণ্ড তাপদাহকে উপেক্ষা করে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় জেলার বিভিন্ন ঈদ বাজারগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটছেন অনেকে। তবে প্রচণ্ড গরমের কারণে দিনের বেলা ফুটপাতের মার্কেটগুলো কিছুটা ফাঁকা থাকলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমলেই ভিড় বাড়ছে। আর সব ধরনের মার্কেটে ভিড় বাড়ছে ইফতারের পর।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) দিনভর জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, আকর্ষণীয় পোশাকের সংগ্রহ রয়েছে প্রতিটি দোকানেই। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে সবকটি মার্কেট ও বিপণি কেন্দ্রগুলো। দিনের বেলা শপিংমলগুলোতে ক্রেতা সাধারণের ভিড় থাকলেও উল্টোচিত্র ছোট দোকান এবং ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে। এখানে আশানুরূপ ক্রেতা না পাওয়ায় হতাশা কাজ করছে বিক্রেতাদের মাঝে।
অন্যদিকে বাইরে ভ্যাপসা গরম, সড়কে যানজট থাকার সুবাধে শপিংমলগুলোতে ভিড় বাড়ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই ঈদের কেনাকাটায় ভিড় করছেন এখানে। এতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন শপিংমলগুলোর বিক্রেতারা।
সাতক্ষীরা চায়না বাংলা শপিং সেন্টারে ঈদ মার্কেট করতে আসা সিদ্দীকুর রহমান জানান, প্রচণ্ড তাপদাহ আর যানজটের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ। ফুটপাতের দোকানগুলোতে দরদাম করে নিত্যপণ্য সামগ্রী কেনা লাগে। তবে এই গরমে সেখানে গিয়ে কেনাকাটা করা কষ্টকর। এজন্য তিনি এই শপিং সেন্টারে এসেছেন বলে জানান।
এসময় লায়লা পারভীন নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, খোলা বা ফুটপাতের দোকানগুলোতে সব ধরনের সামগ্রী থাকে না। পক্ষান্তরে শপিংমলগুলোতে কাপড়, জুতা, কক্সমেটিক্সসহ নিত্যপণ্য পাওয়া যায়। এজন্য সময় বাঁচাতে এবং ভ্যাপসা গরম থেকে স্বস্তি পেয়ে কেনাকাটা করতে তিনি শপিংমলকে বেছে নিয়েছেন বলে জানান।
এদিন সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট সংলগ্ন ফুটপাতে ঈদের মার্কেট করতে আসা ভ্যানচালক আজিজুর রহমান বলেন, ভ্যান না চালালে সংসার চলে না। দিনের বেলা ভ্যাপসা গরমে ভ্যান চালানোর পর আর ইচ্ছে করে না। ফুটপাতে এসে ছেলে-মেয়েদের জন্য কেনাকাটা করি। তবে আমরা গরিব মানুষ। আমাদের অবস্থানের সঙ্গে শপিংমলটা শোভা দেখায় না। এজন্য কম দামে মার্কেট করতে ফুটপাত তাদের একমাত্র ভরসা বলে জানান তিনি।
এসময় তিনি আরও বলেন, দিনের বেলা প্রচুর তাপদাহ চলে। তবে সন্ধ্যায় তাপমাত্রা কিছুটা কম হয়। এজন্য দিনের বেলা মার্কেট না করে সন্ধ্যায় মার্কেট করতে এসেছেন।
একই সময়ে ফুটপাতে ঈদ মার্কেট করতে আসা নাসরিন খাতুন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, খুব সামান্য বেতনে একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। ঘরভাড়া বাবদ খুব সামান্য পরিমাণে অর্থ সাশ্রয় হয় তার। ইচ্ছে থাকলেও শপিংমলে যেতে পারেন না। সেটা সামর্থ্যের বাইরে বলে ফুটপাতে এসেছেন বলে জানান।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশছোঁয়া, সঙ্গে বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে গাড়িভাড়া। তবে আমার মতো যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তাদের বেতন আগের মতো রয়েছে। এতে করে নিজ সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটানো, সংসারের খরচসহ আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
এদিকে বিক্রেতারা জানান, এবারের ঈদে দেশি-বিদেশি সব ধরনের কাপড়ই বেচাকেনা হচ্ছে। তবে প্রচণ্ড গরমের জন্য সুতি শাড়ি, সুতি থ্রি-পিচ ও টি-শার্টের কদর একটু বেশি।
ফুটপাতের বিক্রেতারা জানান, দিনের বেলা বেচাবিক্রি সে অর্থে না হলেও সন্ধ্যার দিকে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা থাকায় তাদের বেচাকেনা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তবে আশানুরূপ ক্রেতা মিলছে না বলে দাবি করেন তারা।
এসজি