প্রশাসনের সহযোগিতায় সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ শিকার!
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের অভয়ারণ্য এলাকায় নিয়মিত মাছ শিকার চলছে। বনের সুপতি, কটকা, কচিখালী, শ্যালা, কোকিলমুনি, হরিণটানা অফিস এলাকার বিভিন্ন নদী-খালের চর ও মোহনায় জাল পেতে মাছ ধরছে জেলে নামধারী প্রভাবশালীরা। জেলেদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রে মাছ ধরার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট অফিসের বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নিয়মিত মাছ ধরার ফলে হুমকির মুখে রয়েছে মৎস্য সম্পদসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
সুন্দরবন অঞ্চল সহ-ব্যবস্থাপনা নেটওর্য়াকের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিলন জানান, সরকার মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সর্বশেষ ২০২০ সালে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা করে। যেখানে জাল, নৌকা, ট্রলারসহ সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্ত পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রগুলোতে শতাধিক নৌকা, অর্ধশত ট্রলারসহ তিন শতাধিক জেলেকে মাছ ধরার সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রভাবশালী জেলেরা বাগেরহাটের শরণখোলা এবং পিরোজপুরের পাথরঘাটার বাসিন্দা।
বাগেরহাট সদর ও শরণখোলা উপজেলার বনজীবীরা জানান, বনের আড়াইবেকি, ডোড়া, আড়কোদালিয়া, পাতারখাল, পাছাভাঙা, বড়কটকা, সিডাকটকা, বেহি, টিয়ারচর কোকিলমুনি, ছাপড়াখালী, কালামেয়াসহ বিভিন্ন অভয়ারণ্য এলাকায় বড়শি, কোরালজাল, চরগড়া, ঢ্যাংজাল ব্যবহার করে অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ শিকার করছেন। খরচিজাল জেলেদের কাছ থেকে সুপতি স্টেশনের বনরক্ষীরা নিচ্ছেন গোনপ্রতি (১০ দিন) ৩৫ হাজার টাকা, বড়শির ছোট নৌকায় প্রতি সপ্তাহে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। সুপতির বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী চরদুয়ানী এলাকার জেলেদের পারমিট না দিয়ে অবৈধভাবে বনে ঢুকিয়ে মাছ শিকার করার অভিযোগ উঠেছে।
তারা আরও জানান, সুপতি ও কটকা অফিসের সামনে থেকে ইঞ্জিনচালিত বোট চলাচল করতে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সপ্তাহে নিচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এ ছাড়া বাধা, খরচিজাল ও কোরালজালের মহাজনপ্রতি কটকা ও কচিখালী ফরেস্ট অফিস প্রতি গোনে নিচ্ছেন ৫০-৬০ হাজার টাকা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব জানান, তিনি শরণখোলায় সদ্য যোগদান করেছেন। অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ শিকারের বিষয়টি তার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। মাছ ধরার ক্ষেত্রে বনরক্ষীরা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজি