অনুমতি পেয়েই সুন্দরবনে চার শতাধিক মৌয়াল
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মৌয়ালেরা প্রতিবছরের মতো এবারও মধু সংগ্রহের জন্য ১ (এপ্রিল) থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ আশায় থাকলে ও মৌয়ালরা অনুমতি পাননি। তবে তিন দিন পর আজ ৪ (এপ্রিল) মঙ্গলবার সকালে কয়রার মৌয়ালরা সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন।
কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে মৌয়ালদের হাতে সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের এ অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, মঙ্গলবার সকাল আটটায় কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন থেকে ৫০টি নৌকার অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পেয়েই সকাল থেকে দলবেঁধে কয়রার চার শতাধিক মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন।
বিলম্বে অনুমতিপত্র দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গত দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মৌয়ালদের আবেদনপত্র রেঞ্জ অফিস থেকে ছাড় করাতে একটু বিলম্ব হয়েছে।
শ্যামা প্রসাদ আরও বলেন, প্রতিটি নৌকায় ১৫ দিনের জন্য মধু আহরণের অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। এক নৌকায় ১০-১২ জন বাওয়ালি অবস্থান করতে পারবেন। একজন বাওয়ালি ১৫ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ কেজি মধু ও ১৫ কেজি মোম আহরণ করতে পারবেন। প্রতি কুইন্টাল মধুর জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা ও মোমের জন্য ২ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক আবু নাসের মোহাম্মাদ মহসীন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে নির্বিঘ্নে মধু আহরণের জন্য বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছে। বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য দলের একজন মৌয়ালকে সবসময় চারিদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া প্রতিটি মৌচাকের কিছুঅংশ রেখে কাটতে বলা হয়েছে। মৌচাকের যে স্থানে ডিম থাকে সেখান থেকে কিছুটা রেখে বাকীঅংশ কাটলে মৌচাকের সংখ্যা চারগুন বৃদ্ধি পাবে। ফলে মধুও বেশি পাওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, গত বছর মধু মৌসুমে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় মধুর পরিমাণ কম হয়েছিল। বৃষ্টির সঙ্গে মধুর একটা সম্পর্ক আছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে ফুল ঝরে যায় ও ফুলে মধুর পরিমাণ কমে আসে।
এ বছর মধু মৌসুমের মার্চ মাসেই কয়েকদফা বৃষ্টি হয়েছে। তাই এবার মধুর পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বাড়বে। এ বছর সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগে ৩ হাজার কুইন্টাল মধু ও ৮০০ কুইন্টাল মোম পাওয়ার আশা করছে বন বিভাগ।
মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি দলে ৭ থেকে ৯ জন সদস্য থাকেন। প্রথমপর্যায়ে তারা ১৫ দিন সুন্দরবনে অবস্থান করে মধু ও মোম সংগ্রহ করে ফিরে আসবেন। পরে আবার সুন্দরবনে যাবেন। এভাবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত টানা সুন্দরবন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করবেন তারা।
মৌয়ালরা জানান, মৌসুমের শুরুতে সুন্দরবনে খলিশা ও গরণ ফুলের মধু পাওয়া যায়। আর শেষের দিকে কেওড়া, গিউ ও ছইলা ফুলের মধু পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো ও দামী হচ্ছে খলিশা ফুলের মধু।
এএজেড