সোনালী মুরগির খামার গড়ে হিরো আতিয়ার
মাগুরায় নিজ উদ্যোগে সোনালী মুরগির খামার গড়ে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন শালিখা উপজেলার সর্বসাংদা গ্রামের সফল খামারী আতিয়ার রহমান। বর্তমানে তার ৫টি খামারে প্রায় ১০ হাজার সোনালী মুরগি রয়েছে। জীবনের শত বাধা পেরিয়ে মনের তীব্র ইচ্ছা,দৃঢ় মনোবল আর তার স্ত্রীর সহযোগিতায় তিনি ঘুরে দাড়াঁন। একে একে গড়ে তোলের নিজ হাতে সোনালী মুরগির খামার। যা থেকে তিনি প্রতি বছর আয় করছেন ১৫-১৬ লক্ষ টাকা।
সরজমিন তার খামারে গিয়ে দেখা যায়, তিনিসহ স্ত্রী পরিশ্রম করে চলছেন খামারে। মুরগির খাবার দেওয়া, পানি দেওয়া ও ঔষধ দেওয়ার কাজ করছেন তারা। মুরগিগুলো যেন তাদের সন্তানের মতো। প্রতিটি খামারের মুরগি গুলো সতেজ ও সবল।
সফল এ খামারী আতিয়ার রহমান জানান, ২০১৭ সালে বিদেশে যাওয়ার জন্য আমি দালালের খপ্পরে পড়ে ১১ লক্ষ টাকা খুয়িয়েছি। তারপর গিয়ে সৌদিআরবের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি ৪-৫ মাস। সেখানেও আমি কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেন খালি হাতে। তারপর দু:শ্চিতার মাঝে আমার জীবন কাটতে থাকে।
এরই মাঝে আমি ২০১৮ সালে মাগুরা শহরের একটি দোকানে ৩ মাস কাজ করি। সেখানেও পরিশ্রম বেশি হওয়ায় কাজ ছেড়ে দেই । ফলে জীবন সংগ্রামের কঠিন পর্যায়ের সাথে যুদ্ধ শুরু হয় আমার। নিজের বাড়ি ছাড়া সামান্য ফসলি জমি আছে আমার। সেখানে যা চাষ হয় তাতে তার সংসার চলে না।
২০১৯ সালের ফেব্রয়ারী মাসে মন স্থির করে একটি ছোট মুরগির খামার গড়ি। বাকীতে ২ লক্ষ টাকার সোনালী মুরগির বাচ্চা তুলি সেই খামারে। নিজ আর্থিক সংকট থাকার কারণে খামারে কোন বাইরের শ্রমিক রাখতে পারেননি। ফলে নিজের স্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে কাজ শুরু করি। শুরু হয় খামারের বাচ্চার পরিচর্যা। এভাবে ধীরে ধীরে ৬৫ দিনে মুরগিগুলো পরিপূর্ণ হয়।
প্রথম বছরে তিনি ১ লক্ষ টাকা লাভ করি। পরের বছর শুরু হয় করোনা। এ করোনাকালীন সময়ে আমি বিচলিত না হয়ে ধৈর্য্যরে সঙ্গে কাজ করে যায়। ফলে সেই বছরেও আমি সফল হয়। এরপর গড়ে তুলি আর একটি খামার। এবার সেই খামারে ৫ হাজার বাচ্চা তোলা হয়। সেই বছর আমি খামার থেকে আয় করি আড়াই লক্ষ টাকা।
কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, ২০২১ সালে নিজ গ্রাম থেকে মুরগির বাচ্চা কেনার জন্য কাটাখালির উদ্দেশ্য রওনা হই। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হই আমি। এ সময় আমার ডান পা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পায়ের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যায় তার। তার পায়ের এতটাই ক্ষতি হয় যে, এক সময় চিকিৎসকরা তার পা কেটে ফেলার পরামর্শ নেয়। আমিসহ পরিবারের মানুষ বিচলিত হয়ে পড়েন। এ সময় খামারে বাইরের শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে চালাতে থাকেন তিনি।
আমি যশোরের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখালে তিনি আমার পায়ের জটিল অপারেশন করেন। সবার দোয়া ও আল্লাহর রহমতে আমার পা কাটতে হয়নি। আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে পরিবার নিয়ে খামারে ফিরে আসি। এ চিকিৎসাবাবদ আমার খরচ হয় ৭ লক্ষ টাকা।
বর্তমানে আমার খামারের মুরগি নিজ জেলাসহ ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রামের ব্যাপারীরা তাদেও গাড়ীতে মুরগি নিয়ে যায়। এখানে আমি তাদের নিকট থেকে নগদ টাকা পাই। বাকীতে কোন ব্যবসা করি না। আগে ১ বস্তা মুরগির খাবার কিনতাম ১৯০০ টাকায়। বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে ৩১০০ টাকায়। ফলে খাবারের দাম বেশি পরিমানে বৃদ্ধিতে আমরা
বিপাকে আছি।
আতিয়ারের স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান,আমার স্বামীর নিজ হাতে গড়া এ খামার। আমি নিয়মিত এ খামারের কাজে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করি। নিজেদের পরিশ্রমের গড়া আজ আমাদেও একটি খামার থেকে হয়েছে আরো ৪টি। সংসারের যাবতীয় খরচ চলছে এ খামারের টাকা থেকে। ভবিষ্যৎে আরও খামারের বৃদ্ধিও ইচ্ছা আছে আমাদের।
সর্বসাংদা গ্রামের চাষী মোস্তফা ও রাহাত বলেন, আতিয়ার আমাদের গ্রামের গর্ব। জীবনের শত বাধা পেরিয়ে সে এখন একজন সফল খামারি হয়েছে। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় সে আহত হলে আমরা ভেবেছিলাম তার খামার আর হবে না কিন্তু সফলতার সঙ্গে সে ঠিকই খামার পরিচালনা করেছে। এটি একটি জলন্ত উদাহরণ আতিয়ারের। আতিয়ারের দেখে আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ এ খামার করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা চাই আতিয়ার আরও উন্নতির চরম শিখরে পৌছাক।
এএজেড